বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অংশে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এদিকে, বারবার প্রতিবাদের পরও সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর গোলাগুলি থামছে না। তুমব্রু সীমান্তে মাঝেমধ্যে গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। এতে তুমব্রু সীমান্ত ও তার আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত আগস্ট মাস থেকে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। এ ঘটনায় প্রায়ই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গত ২৮ আগস্ট এবং ৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় চারটি মর্টারশেল তুমব্রু উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায় এসে পড়েছিল। এ ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো-কে তলব করে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। এর আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিজিবি। এরপরও গোলাগুলি বন্ধ হয়নি।
সোমবার (০৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে তুমব্রু সীমান্তের ৩৪, ৩৫, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের আমতলী ও তুমব্রু এলাকায় গোলাগুলি হয়েছে। একইসঙ্গে মর্টারশেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন এপারের বাসিন্দারা।
সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। সোমবার যেখান থেকে শব্দ শোনা গেছে সেখানে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তুমব্রু রাইট ক্যাম্প। সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওই ক্যাম্পের আশপাশে গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণ হয়েছে। পাশাপাশি মুরিঙ্গাঝিরি বিজিপি সীমান্ত চৌকি এলাকা ও আশপাশ থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি এবং মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, ‘তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বিজিপি ক্যাম্প থেকে পরপর তিনটি মর্টারশেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শুনেছি আমরা। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।’
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যা থেকে আবারও তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অংশে গোলাগুলি শুরু হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলেছি। সেইসঙ্গে সীমান্তের কাছাকাছি যেতে নিষেধ করেছি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি আমরা।’
আরও পড়ুন: তুমব্রু সীমান্তে আবারও মিয়ানমারের গোলাগুলি
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার-৩৪ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি আমরা। সীমান্ত এলাকায় কড়া নজর রাখছেন বিজিবির সদস্যরা। মিয়ানমারে মর্টারশেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির কারণে কেউ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তের বাসিন্দাদের সতর্ক অবস্থায় চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।’
বিজিবির আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গত কয়েকদিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। সোমবার সন্ধ্যা থেকে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে। এতদিন গোলাগুলি বন্ধ থাকায় সীমান্তের লোকজন স্বস্তিতে ছিলেন। আবারও গোলাগুলি শুরু হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন তারা। এ অবস্থায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। সীমান্তের সব জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হঠাৎ গোলার শব্দে ঘর বেরিয়ে আসি। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে অন্তত পাঁচটি গোলার শব্দ শুনেছি। আবারও গোলাগুলি শুরু হওয়ায় আমরা আতঙ্কে আছি।
পাঠকের মতামত