একটি পাকা ভবনের ছোট ছোট তিনটি কক্ষ। তিন কক্ষে ছয়টি শয্যা। কক্ষের বাইরে সাইনবোর্ড। তাতে লেখা, ‘রেহেনা বেগম, ডেলিভারি, চেকআপ ও ধাত্রীবিদ্যায় অভিজ্ঞ’। পাশের আরেকটি পাকা ভবনের আরও তিনটি কক্ষ। সেখানেও একটি সাইনবোর্ডে লেখা, ‘ডা. হোসনে আরা বেগম, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগে অভিজ্ঞ’।
রেহেনা ও হোসনে আরা তাঁরা দুই বোন। চিকিৎসাবিদ্যায় কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তাঁরা দিব্যি অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের চিকিৎসা করছিলেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবও করে আসছিলেন তাঁরা।
রেহেনা বেগম ও হোসনে আরা বেগমের বাবার বাড়ি চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে। রেহেনার শ্বশুরবাড়ি বদরখালী ইউনিয়নের খাল কাঁচাপাড়ায়। আর হোসনে আরার শ্বশুরবাড়ি আজম নগরপাড়ায়।
বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী বাজারের হাসপাতাল রোডে রেহেনা ও হোসনে আরার ‘সেই ডেলিভারি সেন্টারে’ অভিযান চালিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোভন দত্ত। এ সময় তিনি রেহেনা ও হোসনে আরার ডেলিভারি সেন্টার সিলগালা করে দেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত বলেন, চিকিৎসাবিদ্যায় কোনো ডিগ্রি না থাকলেও রেহেনা ও হোসনে আরা ডেলিভারি সেন্টার খুলে অন্তঃসত্ত্বা নারী ভর্তি রেখে ডেলিভারি করাচ্ছেন। এমনকি তাঁরা সিজারও করছেন। বাসাভাড়া নিয়ে তাঁরা সেটিকে চেম্বার ও ক্লিনিক বানিয়ে শয্যা বসিয়েছেন।
রেহেনা ও হোসনে আরা দাবি করেন, তাঁরা ধাত্রী হিসেবে সুপরিচিত। গরিব গৃহবধূরা তাঁদের কাছে ডেলিভারির জন্য আসেন। ডেলিভারি রোগীদের সুবিধার্থে বাসাভাড়া নিয়ে শয্যা বসানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজন তাঁদের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করছেন।
হোসনে আরার ডেলিভারি সেন্টারে গত মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা বের করতে গিয়ে মহেশখালী উপজেলার চালিয়াতলী এলাকার মিরাজ আকতার নামের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত এ অভিযান চালান।
শোভন দত্ত বলেন, মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে প্রসূতি ও শিশুর চিকিৎসা দিতেন হোসনে আরা ও রেহেনা বেগম। মূলত তাঁরা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে এই প্রতারণা করে আসছিলেন। এখন ডেলিভারি সেন্টার দুটি সিলগালা করা হয়েছে। সেখানে কোনোভাবে চিকিৎসা করতে দেওয়া হবে না। তাঁরা চাইলে সেখানে বাসাভাড়া হিসেবে বসবাস করতে পারেন।
সুত্র : প্রথমআলো