ডেস্ক রিপোর্ট ::
বিদ্যুত প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিদেশী ঋণে নতুন করে আর কোন বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে না। ঋণের বদলে বিদেশীরা এ খাতে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করুক। আমরা প্রয়োজনীয় ভূমি ও অবকাঠামো করে দেব। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ১০০ মেগাওয়াট সৌর ও ১০০ মেগাওয়াট বায়ুচালিত বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ১০২ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে এক হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। মূল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে নিজস্ব বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী কোম্পানির বিনিয়োগও থাকবে। এটিসহ একনেক সভায় এক হাজার ৮১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ের ছয় প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এরমধ্যে সরকারী তহবিল থেকে এক হাজার ৮০২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা যোগান দেয়া হবে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৮ কোটি টাকা। এর পুরোটাই সরকারী তহবিল থেকে দেয়া হবে। প্রকল্পটির গুরুত্ব সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ডিএনডি এলাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। দীর্ঘদিন ধরে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তাদের জীবনমান উন্নত হবে। মন্ত্রী জানান, প্রকল্পের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন একযোগে কাজ করবে। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৬ হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদকালে বাস্তবায়িত হবে।
ফরিদপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ৬২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কৃষি এবং অকৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য জেলার গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে। অনুমোদন পেয়েছে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের শস্য সংগ্রহ পরবর্তী সহযোগিতার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) ৬৫ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৯ কোটি টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতায় পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন এটি বাস্তবায়ন করবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ে পাইলট আকারে প্রকল্পটি পাঁচ জেলায় বাস্তবায়ন হবে। পরবর্তীতে এটি সম্প্রসারণ করে অন্যান্য জেলার জন্য নেয়া হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কৃষকরা উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য যেমন পাবেন, তেমনি সঞ্চয়ও বাড়বে। প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকরা প্রত্যেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঋণ পাবেন।
চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় পতেঙ্গা, আনোয়ারা এবং পটিয়ায় পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্পটিও অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮০ কোটি টাকা। মে ২০১৬ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদকালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এটি বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় হবে প্রায় ১৭৭ কোটি টাকা, যার পুরোটাই জিওবি। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত।