গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক নিয়ে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। শত চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে তাদের নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যত দেরি হচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুঁকি। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অনেকেই বিনা অনুমতিতে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্ত হচ্ছে নানা অপরাধের সঙ্গে। এতে নতুন করে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
সব শেষ গতকাল মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শতাধিক রোহিঙ্গাকে উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়ক থেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ গেট সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে সোমবার ৫৫ জন, রোববার ২৯ জন এবং শনিবার ২৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
[caption id="attachment_145691" align="alignnone" width="848"] ফাইল ছবি[/caption]
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসা ঠেকাতে পুলিশ কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। অনেকে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পের নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে আসে। এটা ঠেকাতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।
ওসি বলেন, আটক রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছে। কেউ আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে, কেউ কাজের সন্ধানে, কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বের হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
[caption id="attachment_118518" align="alignnone" width="800"] রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল[/caption]
জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওসি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের নিজ নিজ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে রোহিঙ্গাদের এভাবে ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরাই এখন আতঙ্কে থাকি। রোহিঙ্গারা আসার পর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত। এলাকার অনেক মানুষকে তারা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছি। আপাতত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, এত অল্প জায়গায় এত বেশি মানুষ থাকলে নিরাপত্তা সংকট তো হবেই। এখন এই সংকটের সমাধান যেভাবে সম্ভব, সেটা তো হচ্ছে না। ওদের ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। এখন সেটা তো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আমাদের যেটা করা দরকার, সেটা হলো, নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও কঠোর করতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি অব্যহত রাখতে হবে, যাতে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরানো যায়।
[caption id="attachment_93546" align="alignnone" width="1078"] ফাইল ছবি[/caption]
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী কয়েক মাস গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে।
সর্বাত্মক চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে সরকার একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে পারেনি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বারবার আশ্বাস দিলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা টালবাহানা করছে। এই অবস্থায় লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের জনজীবনে কিছুটা চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে।