এনটিভি::
আগামীতে বিনা ভোটে আর কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারবেন না। কারণ, না ভোটের প্রচলন করতে সুপারিশ করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন। আগামীকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কমিশন এ সুপারিশ জমা দেবে। শুধু না ভোট নয়, নির্বাচনি ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার সুপারিশ করবে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন এ সংস্কার কমিশন।
নির্বাচনি ব্যবস্থায় না ভোট যুক্ত করার সুপারিশের কারণে একজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও সেখানে ভোট হবে। কারণ, ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে না ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে ভোটারের জন্য। ওই স্থানে প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে না ভোটের পরিমাণ বেশি হলে হেরে যাবেন প্রার্থী। ফলে, সেখানে পুনরায় ভোট করতে হবে ইসিকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার এনটিভি অনলাইনকে মঙ্গলবার রাতে বলেন, আগামীকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আমাদের সুপারিশগুলো জমা দেব। নির্বাচনি ব্যবস্থায় যেন মানুষের আস্থা ফেরে, সে চিন্তা মাথায় রেখে আমরা আমাদের সুপারিশগুলো প্রস্তুত করেছি। এসব সুপারিশগুলো প্রস্তুত করতে আমরা প্রচুর মানুষ ও অনেক দলের মতামত নিয়েছি। আমরা না ভোটের বিধান যুক্ত করতে সুপারিশ করছি। এ ছাড়া নির্বাচনি ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে একগুচ্ছ সুপারিশ করছি।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে কোনো দলের প্রার্থী হতে হলে ওই দলে অন্তত তিন বছর সদস্য হিসেবে থাকতে হবে। অর্থাৎ ডিগবাজির সুযোগ আর থাকছে না। মন চাইল আর নিজ দল ছেড়ে অন্য দলের মনোনয়ন নেব, সেই সুযোগ আর থাকছে না।
একই সঙ্গে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করা সদস্যদের অনিয়ম তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করছে কমিশন।
কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনারদের আচরণবিধি, নির্বাচনি প্রচারণা ও সীমানা আইনে পরিবর্তন, বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতির পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি, সংসদের আসন সংখ্যা বাড়ানো, নারী আসনে সরাসরি ভোট, নির্বাচনি প্রশাসনকে শক্তিশালী করা, পাঁচ বছর পর পর দলের নিবন্ধন রিভিউ ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতায় আনাসহ এক গুচ্ছ সুপারিশ জমা দেবে নির্বাচন সংস্কার কমিশন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র বলছে, সিইসি ও ইসি নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটিতে সংসদের বিরোধীদল এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, ক্ষমতা, ইসির দায়বদ্ধতা; নির্বাচন বাতিল করার বিষয়, রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ১৯৯১ বিশেষ আইন, নির্বাচনি অপরাধ, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, গণমাধ্যম নীতিমালা; নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি ও গণভোটসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদনে সুপারিশ দিচ্ছে কমিশন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত এ কমিশনে যুক্ত থাকা একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে জানান, একজন প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। ইসি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ নেওয়ার বিধান বাদ দেওয়া, তফসিল ঘোষণার পরে যে কোনো পর্যায়ে নির্বাচন স্থগিত করার ক্ষমতা ইসির হাতে রাখতে আরপিও সংশোধনসহ বেশ কিছু সুপারিশ করছে কমিশন।
আগামীকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সরকারের কাছে সংবিধান সংস্কার কমিশনেরও সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা হয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এতদিন সংসদের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩৫০টি। কিন্তু এবার তা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ৪০০ আসন থাকবে সংসদের নিম্নকক্ষে। আর উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০৫টি। একইসঙ্গে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষিত থাকবে। তবে, এসব আসনে সরাসরি ভোট হবে। মোট আসন সংখ্যা হবে ৫০৫টি।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়াও দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনও আগামীকাল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। একইসঙ্গে বিচারব্যবস্থা ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চলতি মাসের শেষের দিকে দেওয়ার কথা