মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধন বা কাবিননামা বর-কনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। নিবন্ধন বা কাবিননামা ব্যতীত বিবাহ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে মেয়েদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় সবচেয়ে বেশি। দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি দাবির ক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধন বা বিবাহের কাবিননামা বিচারিক আদালতে আইনগত দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। তাছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কাবিননামার গুরুত্ব ব্যাপক। বিশেষ করে কাবিননামায় বয়স উল্লেখ করতে হয় বিধায় বাল্য বিবাহ রোধও সম্ভব।
এটি বিবাহিত ছেলে-মেয়ে উভয়ের ভবিষ্যত আইনগত অধিকার সংরক্ষণ করে। বিবাহ সম্পর্কে উভয় পক্ষ থেকেই যে কোন সময় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, তখন কাবিননামা প্রমাণ পত্র হিসেবে কাজ করে। নিবন্ধনবিহীন বিবাহের কারণে যেমন অনেক নারী নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও স্বামীর অধিকার, সম্পদের উত্তরাধিকার, নিজ সন্তানের পিতৃত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আবার অনেক পুরুষও বিবাহ নিবন্ধন বা কাবিননামা না থাকায় নারীদের আক্রমণের শিকার।
এ কারণেই রাষ্ট্রীয়ভাবেই বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রমকে অত্যাবশক করা হয়েছে। এ নিবন্ধনের মাধ্যমেই বরকনের পরিপূর্ণ তথ্য নির্ধারিত নিবন্ধন বইতে সংরক্ষিত থাকে। যাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অধিকার রক্ষা হয়। যদিও বিবাহের ক্ষেত্রে কাবিন আবশ্যক। তথাপিও কাবিন বিবাহের কোনো অংশ নয়। কাবিন ছাড়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে সে বিবাহ বৈধ হবে। দাম্পত্য জীবনে এক সঙ্গে বসবাস করা যাবে। এ বিষয়ে ইসলামে কোনো অসুবিধা নেই। মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য দেশের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী বিবাহের নিবন্ধন অত্যন্ত জরুরি।
কেননা দেশে রাষ্ট্রকর্তৃক নির্ধঅরিত মুসলিম বিবাহ আইন রয়েছে। আর বিবাহের এ নিবন্ধনকেই বলা হয় কাবিন। আর যিনি এ নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদন করেন তাকে প্রচলিত ভাষায় বলা হয় কাজি। দেশের প্রতিটি প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডেই সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আলাদা আলাদা কাজি বা বিবাহ নিবন্ধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়োজিত রয়েছে। যারা বিবাহের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর ও কনের ব্যক্তিগত ও বিয়ে সংক্রান্ত তথ্য বিবাহ নিবন্ধন (বালাম) বইতে লিপিবদ্ধ করেন।
বিবাহ নিবন্ধনের সময় কাজী বর-কনেসহ বিবাহের সাক্ষী, বর-কনের অভিভাবক, যে ব্যক্তি বিবাহ পড়িয়েছেন তাদের সবার নাম ও সাক্ষর রাখেন। বিবাহের সময় নির্ধারিত মহর কত ইত্যাদি তথ্য সংযোজন করেন। বিবাহ নিবন্ধনের মাধ্যমেই বর ও কনের সব তথ্য সরকারের তথ্যভাণ্ডারে নথিভুক্ত হয়। যা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সামাজিক নিরাপত্তার রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। তবে কাবিন প্রক্রিয়া নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই প্রতারণা ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকতে যথেষ্ট কার্যকরী এ কাবিন। স্ত্রীর জন্য স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর জন্য উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে বিবাহ নিবন্ধন বা কাবিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত, নারী হোক কিংবা পুরুষ; উভয়ের জন্যই কাবিন অনেক জরুরি বিষয়।
আবার পারিবারিক বন্ধন বিচ্ছিন্ন তথা তালাকের ক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধন বা কাবিন আরো বেশি প্রয়োজন। কারণ এ নিবন্ধন ওপর ভিত্তি করেই তালাক সংক্রান্ত ফয়সালা নির্ধারিত হয়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে আদালত তথা বিচারিক কার্যক্রমে অধিকার নিশ্চিত করতে এ কাবিন বা বিবাহ নিবন্ধনের তথ্য প্রয়োজন হয়। যা স্বামী-স্ত্রীর জন্য একটি আবশ্যকীয় প্রমাণ। সুতরাং বর-কনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও সহাবস্থান এবং সত্যতা নিরূপনে কাবিনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। দেশের প্রতিটি সচেতন ব্যক্তি ও পরিবারের উচিত বিবাহের সময় বর-কনের নিরাপত্তা ও পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার লাভে বিবাহের নিবন্ধন (কাবিন) কার্যক্রম সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।