পরিচয় বা আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে বিয়ের ঘটনা প্রায়শই শোনা যায়। বাল্যবিয়েও এখনও রোধ করা যায়নি। আইনবহির্ভুত একাধিক বিয়ে ও বাল্যবিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে নাগরিকদের বিবাহ ও তালাকের সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকায় অনেকক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন অনলাইনের আওতায় এনে একটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য আইন ও বিচার বিভাগ ‘অনলাইনে বিবাহ ও তালাক’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন ও ভাইটাল স্টাটিসটিক্স ( সিআরভিএস)’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সিআরভিএস হচ্ছে একটি একক আইডি বা পরিচয় নম্বর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নাগরিক জীবন প্রবাহের উল্লেখযোগ্য ঘটনা তথ্য-উপাত্ত আকারে সংরক্ষণ এবং এর ভিত্তিতে সরকারের সেবা নিশ্চিত করা।
আইন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নাগরিক তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের পাশাপাশি তথ্য গোপন করে বিবাহ ও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। দুটোই দেশের ফৌজদারি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব কারণে যৌতুক এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। প্রকল্পটির একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রথমে বিবাহ ও তালাক বিষয়ে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হবে।
তিনি আরও জানান, সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য সারাদেশের নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এন্ড্রয়েড মোবাইল সরবরাহ করা হবে। দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। নির্দিষ্ট কিছু তথ্য দিয়ে বিবাহ বা তালাক নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য সফটওয়্যারটি এমনভাবে সাজানো হবে, যেখানে বয়স লুকানোর সুযোগ থাকবে না। পাশাপাশি কারও আগে বিয়ে থাকলে তার তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে চলে আসবে। তথ্য ভাণ্ডারের মূল সার্ভার স্থাপন করা হবে আইন ও বিচার বিভাগে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে ব্যাকআপ সার্ভার স্থাপন করা হবে। আবার যাতে নাগরিকরা চাইলে বিবাহ নিবন্ধন সনদ অনলাইন থেকে নিতে পারেন সে ব্যবস্থাও থাকবে।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি ১০টি উপজেলায় পাইলট ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। দুই বছর পাইলট প্রকল্প পরিচালনার পর তার অভিজ্ঞতা বা কার্যক্রমের ভিত্তিতে দেশব্যাপী প্রকল্প নেওয়া হবে। বর্তমানে বাল্যবিয়ের ঘটনা বেশি এমন পাঁচটি উপজেলা এবং দৈবচয়ন ভিত্তিতে আরও পাঁচটি উপজেলা নিয়ে এ প্রকল্প সাজানো হবে।
এ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে আশা করছে আইন ও বিচার বিভাগ।
পাঠকের মতামত