
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩১ জুলাই মারা যান তিনি। মৃত্যুর তিনদিন পরই (৪ আগস্ট) প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিল সেলিম-সুমি দম্পতির। ৮ আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা যায় সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার অন্তঃসত্ত্বা।
অতঃপর শনিবার (৮ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে সুমী আক্তারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নলছিটি শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে দুনিয়ার আলো দেখে শহীদ সেলিম তালুকদারের কন্যা সন্তান। তবে প্রিয় সন্তান মুখ দেখতে পারেনি তার বাবার। রমজান মাসে জন্ম নেওয়ায় নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ‘রোজা’।
এদিকে রোববার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান ও পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায়, সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাওছার হোসেন, অন্তরা হালদার ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন ক্লিনিকে দেখতে গিয়ে শিশুটিকে কোলে নিয়ে শুভেচ্ছা উপহার দেন। শিশুটির মা সুমী আক্তারকে বিভিন্ন প্রকারের ফল এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এসময় জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান তাদের সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
এরপর দুপুর ২টার দিকে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট বিএম আমিনুল ইসলাম ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ফরিদুল হক উপহার সামগ্রী নিয়ে নবজাতক রোজাকে দেখতে যান। এসময় নায়েবে আমির শিশু রোজার বেড়ে ওঠা, পড়ালেখাসহ বিবাহ পর্যন্ত সার্বিক খরচের দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দেন।
এছাড়া শনিবার রাতেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক আল তৌফিক লিখন ও সদস্য সচিব রাইয়ান বিন কামালসহ ছাত্রনেতারা নবজাতককে দেখতে যান।
শহীদ সেলিম তালুকদার ওরফে রমজানের মা সেলিনা বেগম জানান, ১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ তখনও রমজান মাস চলছিল। ওই সময় আমার ছেলের জন্ম হয়। এজন্যই ওর ডাক নাম রাখা হয়েছিল রমজান। সার্টিফিকেট নাম সেলিম তালুকদার। রমজান শহীদ হওয়ার ৭ মাস পরে রমজান মাসেই তার সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায়। এজন্যই ওর নামও রাখা হয়েছে ‘রোজা’।
সেলিম তালুকদার (২৮) একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন। ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সেলিম তালুকদারকে।
সেলিম নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সুলতান হোসেন তালুকদারের ছেলে। তিনি বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজ।
নিহত সেলিমের স্ত্রী সুমী জানান, ওইদিন সকালে বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের সময় বেলা ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন।
সুমি আক্তার বলেন, আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তানই আমার কাছে থাকবে। আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তানকে যেন কারও কাছে হাত পাতা না লাগে। আমি যতদিন বাঁচবো শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচবো। সন্তানকে তার পরিচয় দেবো।
পাঠকের মতামত