বিলাসবহুল ক্রুজশিপে নদী-সাগর পথে সরাসরি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে কর্ণফুলী শিপ বির্ল্ডাস। কর্ণফুলী শিপ বির্ল্ডাসের কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে চালু হতে যাওয়া বিলাসবহুল ক্রুজশিপ করে দিবে সেই সুযোগ।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৬ অক্টোবর থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনের মধ্যে সরাসরি যাতায়াত শুরু করবে এমভি ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ এবং আগামী ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিনের মধ্যে চলাচল করবে বিলাসবহুল ক্রুজশিপ ‘এমভি বে ওয়ান’। এছাড়াও শীঘ্রই এই বহরে যুক্ত হবে ‘বারো আওলিয়া’ নামে নতুন আরেকটি ক্রুজশিপ।
এমভি কর্ণফুলী সকালে কক্সবাজার এয়ারপোর্ট সড়কের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে দুপুরে সেন্টমার্টিন পৌঁছাবে এবং একই দিন বিকেলে সেন্টমার্টিন থেকে ফিরতি পথ ধরে রাতে কক্সবাজার।
জানা যায়, ২০২০ এর জানুয়ারীতে যাত্রা শুরু হয় দেশের প্রথম ও একমাত্র এই নৌরুট। এই ক্রুজলাইনের হাতেখড়ি মূলত- কর্ণফুলী দিয়ে। ১৭টি ভিআইপি কেবিন ও তিন ক্যাটাগরির প্রায় ৬০০ আসন এবং আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই জাহাজ দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫৫ মিটার এবং প্রস্ত ১১ মিটার।
তবে, কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে প্রবাল দ্বীপ- সেন্টমার্টিন। পর্যটকদের কাছে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনের গুরুত্ব অপরিসিম। কক্সবাজার ট্যুরে প্রবাল বেষ্টিত সেন্টমার্টিন না গেলে ট্যুরটা যেন আধরাই রয়ে যায়। ফলে ভ্রমণ তালিকায় সাধারণত কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন/সেন্টমার্টিন-কক্সবাজার থাকেই।
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করতে পর্যটকদের টেকনাফের ঘুরতি পথ ধরতে হত। তবে ২০২০ পর্যটন মৌসুম থেকে বিলাসবহুল ক্রুজশিপ এম ভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সরাসরি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন যাতায়াতের মধ্যে দিয়ে এই জার্নিকে নীল সমুদ্রের নান্দনিক ভ্রমণে রুপ দিয়েছে। বিগত ২ বছর যাবৎ পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজার শহর থেকেই সেন্টমার্টিন যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছেন।
শিপটি কক্সবাজার এয়ারপোর্ট সড়কের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সকালে ছাড়ে এবং বিকেলে সেন্টমার্টিন থেকে ফিরতি পথ ধরে। জাহাজের সম্মুখভাগে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কমন সিভিউ কেবিন- ক্রিসেন্ট টিমামের সোফায় বসে অথবা রুফটপে নদী তীরবর্তি অপূর্ব দৃশ্য ও সাগরের ঢেউয়ের ছন্দে, আড্ডায়-গল্পে জাহাজ কখন যে প্রবাল দ্বীপের নীল সাগরে পৌঁছে যায়, টেরও পাওয়া যায় না।
কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ জানান, এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেসকে নিজস্ব ডকইয়ার্ডে একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল জাহাজ হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৭টি ভিআইপি কেবিন সমৃদ্ধ এই জাহাজ ঘণ্টায় প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে ছুটতে পারে।
তিনি আরো জানান, এই মৌসুমে এমভি বারো আওলিয়া নামক একই কম্পানীর আরো একটি ক্রুজশিপ এই রুটে যুক্ত হতে যাচ্ছে। শুধু এই রুটেই নয়, চট্টগ্রাম ও সেন্টমার্টিন রুটেও ২ বছর ধরে চলছে একই কম্পানীর পাঁচতারকা মানের ৭তলা আরেক বিলাসবহুল জাহাজ ‘এমভি বে ওয়ান। ‘ দেশের ইতিহাসে এটিও প্রথম ও একমাত্র ক্রুজশিপ।
সাগরবক্ষ থেকে প্রবালদ্বীপকে দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে এমভি সেন্টমার্টিন ক্রুজ নামক একটি বার্জ। বড় হলরুম সদৃশ এই বার্জে করে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড, ছেড়া দ্বীপ ও ঘোড়া দ্বীপ এবং নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
জাহাজটিতে রাউন্ড ট্রিপে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৮ হাজার টাকা। শ্রেণী ভেদে রয়েছে ভাড়ার ভিন্নতা। নৌযানটিতে তিন ক্যাটাগরির প্রায় ৬০০ আসন রয়েছে। তন্মধ্যে আছে সিভিউ এসি সোফা সিটিং- ক্রিসেন্ট টিমাম, ভিআইপি ও ভিভিআইপি কেবিন, সাইট ভিউ এসি কেবিন, রুফটপ, কনফারেন্স রুম, ডাইনিং স্পেস ও প্রসস্ত ব্যালকনিসহ আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।
বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনা করে এ শিপে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ল্যাভেন্ডার ও ম্যারিগোল্ড নামক ইকোনমি চেয়ার সিট- (রাউন্ড ট্রিপ) ৩২০০ টাকা, ওয়ান ওয়ে ১৭০০টাকা। গ্ল্যাডিয়াক ওপেন ডেক ও লিলাক লাউঞ্জ নামক বিজনেস ক্লাস (রাউন্ড ট্রিপ) ৪০০০টাকা, ওয়ান ওয়ে ২১০০টাকা। ক্রিসেন্ট টিমাম (রাউন্ড ট্রিপ) ৪৫০০টাকা, ওয়ান ওয়ে ২৩০০টাকা।
এ ছাড়া- সিঙ্গেল কেবিন (রাউন্ড ট্রিপ) ৭৫০০টাকা, ওয়ান ওয়ে ৪০০০টাকা। টুইন কেবিন (রাউন্ড ট্রিপ) ১২০০০টাকা, ওয়ান ওয়েঃ ৬৫০০টাকা, ভিআইপি (রাউন্ড ট্রিপ) ২০,০০০টাকা, ওয়ান ওয়ে ১১৫০০টাকা, ভিভিআইপি (রাউন্ড ট্রিপ) ২৮০০০টাকা, ওয়ান ওয়ে ১৫০০০ টাকা।
এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যাবে ০৯৬১০৮৪৯৯৭০, ০১৮৭০৭৩২৫৯৮ নম্বরে।