টেকনাফে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হওয়া স্কুলছাত্র তাউসিফুল করিম রাফি জামিন পেয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মজিদের আদালত এ আদেশ দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ ইউনুস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে জেলা পুলিশের উদ্যোগে এ জামিন নিশ্চিত করা হয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলছাত্রের আইনজীবীরা আদালতে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে আদালত আসামির বয়স ও চলমান বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচি বিবেচনায় স্থায়ী জামিনের আদেশ দেন।
পুলিশ সুপারের উদ্যোগে স্কুলছাত্র রাফির জামিন
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মানবিক কারণে আমি কিশোর রাফির জামিনের ব্যবস্থা করেছি। তার আইনজীবীসহ সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি জামিনের জন্য তার মা ও বাবা কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক আমাকে জানিয়েছেন, রাফি যে পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিতে পারেনি, সেগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া হবে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, রাফি শিশু নয়; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিটি অনেক আগের। বাস্তবে সে একজন কিশোর।
রাফি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা রেজাউল করিম একজন জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলা যুবলীগের সদস্য।
পুলিশের অভিযানে রাফির বাবাকে না পেয়ে তার কিশোর ছেলেকে অস্ত্রসহ ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বুধবার হাইকোর্টে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়।
পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, আদালত ওই রিট আমলে নিয়েছেন। শুনানির পর স্কুলছাত্রের জামিন মঞ্জুর হয় এবং টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে সশরীরে হাজির হয়ে ঘটনার বিষয়ে আইনগত অবস্থান উপস্থাপন করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের দাবি ও পরিবারের অভিযোগ
পুলিশের ভাষ্যমতে, ২৬ নভেম্বর ভোরে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় একটি বাড়ির সামনে থেকে দুইজন পালানোর চেষ্টা করলে এক কিশোরকে আটক করা হয়। তার হাতে থাকা নীল রঙের শপিং ব্যাগ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি গুলি এবং ৪০টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও দাবি করে, অস্ত্রটি রাফির বাবা তাকে পাশের বাড়ির পেছনে লুকিয়ে রাখার জন্য দেন। তার বাবা সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে রাফিকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
তবে রাফির পরিবার দাবি করে, তার বাবার রাজনৈতিক ও নির্বাচনি প্রতিপক্ষের যোগসাজশে পুলিশ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়েছে। রাফির বাবা রেজাউল করিম বলেন, রাজনৈতিক ও নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার ছেলেকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ ও রাফির মুক্তি
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দায়ের করা রিট শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে নির্দেশ দেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান আদালতকে জানান, রাফি জামিন পেয়েছে এবং মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।
এদিকে প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে জামিনে মুক্তি পাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে রাফির পরিবারে।
পাঠকের মতামত