জাগো নিউজ::
জাপানে উৎপাদন হয় বিশেষ এক ধরনের কালো রঙের গরু। ‘কোবে বিফ’ নামে পরিচিত বিশেষ এ গরুর মাংস বিশ্বের সবচেয়ে দামি গরুর মাংস হিসেবে পরিচিত। কোবে বিফ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বাংলাদেশে একটি প্ল্যান্ট স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটির একটি খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। এস ফুডস নামের প্রতিষ্ঠানটি জাপান থেকে এ মাংস এনে বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করতে চায়।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট অফিসার ও বিজনেস গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার শিনিচি মিয়াওয়াকি এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। এসময় জাপানের আরও ৩১টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এস ফুডসের প্রতিনিধির কাছে সালমান এফ রহমান জানতে চান, তারা হালাল উপায়ে মাংস রপ্তানি করতে পারবেন কি না? এছাড়া তারা বাংলাদেশে ওই গরু ফার্মিং করতে চান কি না?
মিয়াওয়াকি জানান, তারা দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও এ পণ্য রপ্তানি করছেন। এ কারণে তাদের হালাল সার্টিফিকেশন রয়েছে। তারা জাপান থেকে বাংলাদেশে মাংস এনে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করতে চান।
জাপানিজ কোবে বিফকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান গরুর মাংস। এর প্রতি কেজির মূল্য ২৪০০০ থেকে ৩৫০০০ টাকা। তাজিমা প্রজাতির গরু থেকে এ মাংস উৎপাদন করা করা হয়।
শুধু দাম বা স্বাদের দিক থেকেই নয়, রঙ আর গন্ধের দিক দিয়েও রয়েছে এই মাংসের ভিন্নতা। মাংসের পরতে পরতে ফ্যাট, নরম ও তুলতুলে মাংস এবং স্বাদের জন্য এটি সারাবিশ্বে সমাদৃত একটি খাবার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তাজিমা গরু উৎপাদনের জন্য পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের গরুকে খুবই উন্নত ও চাপমুক্ত পরিবেশে রাখা হয়। উন্নত মানের কোবে মাংস উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা হয়। জাপানের কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিষয়টি কড়া নজরদারিতে রাখে। তবে এ ধরনের যে পরিমাণ মাংস উৎপাদন হয় তার খুবই সামান্য অংশ রপ্তানি হয়। ২০২২ সালে জাপান ৭৭৭৮ মেট্রিক টন কোবে মাংস রপ্তানি করেছে।
জানতে চাইলে এস ফুডস ইনকরপোরেটেডের করপোরেট অফিসার ও বিজনেস গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার শিনিচি মিয়াওয়াকি জাগো নিউজকে বলেন, জাপান থেকে গরুর মাংস এনে বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত করার পরিকল্পনা করছি। সুস্বাদু এ মাংস হালাল উপায়ে রপ্তানির বিষয়ে বেসরকারি উপদেষ্টাকে জানিয়েছি।
এস ফুডস ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। জাপানের বাইরেও আমেরিকা, কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে এর ফুড চেইন রয়েছে।
জাপানি প্রতিনিধিদলের সমন্বয়কারী বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ নেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, এস ফুডস জাপানের সবচেয়ে বড় খাদ্য পণ্যের প্রতিষ্ঠান। উনারা প্রথম বাংলাদেশে এসেছেন। কোবে মাংসটা অত্যন্ত সুস্বাদু। দুবাইতে হালাল পদ্ধতিতে তারা রপ্তানি করে। বাংলাদেশেও হালালভাবে তারা রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমাদের যেহেতু এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে মাংস আমদানি বন্ধ রয়েছে, ভবিষ্যতে যখন চালু হবে, তখন বাংলাদেশের মানুষও যাতে এ টেস্টি মিটটা ট্রাই করতে পারে।
সালমান এফ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ওরা কোবে মাংস রপ্তানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোবে বিফের উৎপাদন এখানে করতে চাও, না প্রসেস করতে চাও? ওরা বললো, আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছি গরুটা অন্যান্য দেশে উৎপাদন করার। কিন্তু জাপানেই এটা হয়। আমরা ওখান থেকে নিয়ে আসবো এবং এখানে প্রসেস করবো।
সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের মার্কেটে আনলে হালাল হতে হবে। তারা দুবাইতে রপ্তানি করে, হালাল সার্টিফিকেশন আছে বলে জানালো। এটা ভালো। তারা এনে যদি প্রসেসও করে, এখান থেকে আশপাশের দেশে আমরা রপ্তানি করতে পারবো। দেশের পাঁচতারকা হোটেল, বাংলাদেশে থাকা বিদেশি এবং সেখানে থাকা পর্যটকদের জন্য কোবে গরুর মাংসের চাহিদা থাকবে।
তবে উচ্চ দামের এ মাংস ব্যাপক হারে আমদানির পক্ষে নন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ এমরান জাগো নিউজকে বলেন, মুসলমান দেশে কোনো মাংস আনতে হলে হালাল সার্টিফিকেশনের প্রয়োজন হবে। কোবে মাংস সাধারণ মানুষের জন্য না। জাপানি অ্যাম্বাসিতে তারা তাদের নিজেদের জন্য ইম্পোর্ট করতে পারে। ফাইভ স্টার হোটেল ও অ্যাম্বাসিগুলোর জন্য বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে আমদানি করা যেতে পারে। কিন্তু যদি থার্ড পার্টি দিয়ে করায় তাহলে খোলাবাজারে ফেসবুক দিয়ে বিক্রি করে।
বাংলাদেশে এক্সটিক মিটের (দুম্বা বা উচ্চদামের বিভিন্ন গরুর প্রজাতির) চাহিদা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্সটিক মিট এখানে কম। কোরবানি ঈদের সময় সৌখিন কিছু মানুষ এ পশুগুলো কিনে থাকে।
কোবে মাংস আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে এত ডলার ক্রাইসিস। বাংলাদেশে রিজার্ভ নিয়ে এত সমস্যা। আমাদের এখন এ সৌখিনতা করার আসলে সময় নাই।
বিশেষ ধরনের ওই গরুর মাংস বাংলাদেশে আমদানি এবং প্রক্রিয়াকরণের প্ল্যান্ট নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব কিছুই এখনো প্রস্তাবনার পর্যায়েই রয়েছে। কোথায় মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি হবে, প্রাথমিক বিনিয়োগ কত হবে সেটি তারা এখনো চূড়ান্ত করেনি। তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে সালমান এফ রহমান তাদের সম্ভাব্যতা যাচাই করার কথা বলেছেন
পাঠকের মতামত