আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার::
বিশ্ব পরিমণ্ডলে সংযোগ স্থাপনে পুরোপুরি প্রস্তুত হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। ইতিমধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ণ হতে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ইতিপূর্বে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে উন্মুক্ত হয়েছে। রানওয়ে চওড়া করা হয়েছে দেড়শ থেকে ২০০ ফুট। বিমানবন্দরের এই রানওয়ে দিয়েই বোয়িং ৭৩৭ এর মতো সুপরিসর বিমানসহ দৈনিক ৯-১০টি বিমান ওঠানামা করছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর কক্সবাজার বিমানবন্দরটি হলো দ্বিতীয় এয়ার ফিল্ড, যাতে এয়ারলাইনস বেজ স্টেশন রয়েছে। লাইটিংসহ রানওয়ে সম্প্রসারণের বাকি কিছু কাজ সম্পন্ন হলেই কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোয়িং ৭৭৭ এর মতো সুপরিসর বিমান ওঠানামা করবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) তথ্যমতে, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)-এর প্রাক্কলিত ব্যয় ১১৯৩.৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ৮০২.৬৬ কোটি টাকা এবং সিএএবির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৩৯১.৬৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০০৯ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে গত জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলো— হাল্লা করপোরেশন (কোরিয়া), মীর আকতার হোসেন লি. (বাংলাদেশ) এবং সিয়োকওয়াং লি. (কোরিয়া)। বিমানবন্দরের রানওয়ে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিকরণ, রানওয়ে প্রশস্তকরণ, রানওয়ে শোল্ডার নির্মাণ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। টেক্সিওয়ে, ওভার রান নির্মাণ চলছে। গ্রাউন্ড ট্রিটমেন্ট ও বাঁধ রক্ষার কাজ শেষ হয়ে গেছে। ভবন নির্মাণ কাজের মধ্যে পাওয়ার হাউস ও সিসিআর রুমের কাজ সম্পন্নের পথে। এজিএল সিস্টেম স্থাপনের মধ্যে ইউরোপিয়ান ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান ডিজাইন চূড়ান্ত করেছে ও মালামাল নিয়ে এসেছে। মোট ৩২১.৩৪ হেক্টর জমির মধ্যে ২৭৬ হেক্টর অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়নের মধ্যে ৯ লাখ ২২ হাজার ঘনমিটারের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। এলজিইডি কর্তৃক ৫৯৫ মিটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প ও বিডব্লিউডিবি কর্তৃক স্লোপ প্রোটেকশন বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের পথে।
২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বোয়িং ৭৩৭ বিমান নিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ওঠানামা করেন। ওইদিন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধনে এসে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সুপরিসর বোয়িং বিমান চলাচল কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল কক্সবাজার বিমানবন্দর। এ বিমানবন্দরের ৬ হাজার ৭৭৫ ফুটের রানওয়ে এখন ৯ হাজার ফুটে উন্নীত হয়েছে। চওড়া করা হয়েছে দেড়শ থেকে ২০০ ফুট। পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্যায়ে মহেশখালী চ্যানেলের দিকে আরও এক হাজার ফুট রানওয়ে বাড়ানো হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এয়ার ফিল্ড লাইটিং সিস্টেম, ফায়ার ফাইটিং যানবাহন এবং যোগাযোগ যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ বাকি কাজ শেষ হবে। এসব কাজ শেষ হলেই বিশ্ব পরিমণ্ডলের সুপরিসর বিমান নামবে কক্সবাজারে। কক্সবাজার বিমানবন্দরে কর্মরত মীর আকতার হোসাইন লিমিটেডের এক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরটি বোয়িং ৭৭৭ এর মতো সুপরিসর বিমান ওঠানামার উপযোগী করে তৈরি করা হবে। এটি আরও উন্নত হবে যদি সামনে ১ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়। তবে ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক একেএম সাইদুজ্জামান জানান, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি উল্লেখযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এর উন্নয়ন কাজের তদারকি করছেন। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে বিশ্ব পরিমণ্ডলের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এই বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমান, রিজেন্ট এয়ারলাইনস, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ৯-১০টি বিমান দৈনিক আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে বোয়িং ৭৩৭ বিমানও রয়েছে। এ ছাড়াও ৫ থেকে ৬টি কার্গো বিমানও আসা-যাওয়া করে। কার্গো বিমানগুলো এখানে অবস্থান করে এবং এখানেই রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাকি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্ব সংযোগে ভূমিকা রাখতে শুরু করবে।