নিউজ ডেস্ক::
৩৫তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে নিয়োগ চলছে। ৩৬তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় সরকার ৩৮তম বিসিএসের চাহিদা চূড়ান্ত করলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারছে না পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। চলমান পরীক্ষাগুলোর কাজের চাপ সামাল দিয়ে একটু সময় নিয়ে ৩৮তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করবে পিএসসি।
অথচ প্রতিবছরের শুরুতেই বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কথা। সিভিল সার্ভিস নিয়োগ পরীক্ষায় মেধাবীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য পিএসসি নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
একসময় পিএসসি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে দিলেও সময় মতো নিয়োগ দিতে পারত না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এখন পিএসসি উল্টো চাপে পড়ে গেছে। কেন এই চাপে—জানতে চাইলে পিএসসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে পরীক্ষা কম ছিল। সেসব পরীক্ষায় প্রার্থীও ছিল কম। এখন পরীক্ষা বেড়েছে, প্রার্থীও বেড়েছে। কিন্তু এসব বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিএসসির সাংগঠনিক কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়নি। ২০১৫ সালে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় দুই হাজার ১৮০টি শূন্য পদের বিপরীতে দুই লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন আবেদন করেছেন। একই সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে এক লাখ ৫৩ হাজার, আইন মন্ত্রণালয়ের সাবরেজিস্ট্রার পদে ৭০ হাজার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্কল অ্যাডজুট্যান্ট পদে ৫১ হাজার প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০১৫ সালে কমিশন মোট ১৬১টি নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছে। এতে কমিশনের কাজ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার জন্য কমিশনের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন করে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরে ১২০টি পদ সৃষ্টির কার্যক্রম চলছে। কিন্তু এখনো তা শেষ হয়নি।
কর্মকর্তারা আরো জানান, সাংগঠনিক কাঠামো বড় করার সঙ্গে সঙ্গে পিএসসির তথ্য-প্রযুক্তি ইউনিট সমৃদ্ধ করা দরকার। তা ছাড়া বিভাগীয় সদরে ভাড়া বাড়িতেও পিএসসির অফিস রয়েছে। নিজস্ব অফিস ভবন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ তথ্য-প্রযুক্তি ইউনিট থাকলে অনেক পরীক্ষা বিভাগীয় পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব। পিএসসির উত্তরপত্র নিরীক্ষার সম্মানী কম। এ কারণে যোগ্য, খ্যাতিমান ও দক্ষ ব্যক্তিরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে চান না। তা ছাড়া উত্তরপত্র তাঁদের বাড়িতে পাঠাতে হয়। এসব বিষয় মানসম্পন্ন পিএসসি গঠনের অন্তরায়। আকর্ষণীয় সম্মানী দিতে পারলে পরীক্ষকদের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন সম্ভব বলে জানিয়েছেন পিএসসির কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, শুধু নিয়োগ পরীক্ষা নয়, পিএসসির অন্যান্য কার্যক্রমও বেড়েছে। সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষা বেড়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও অপিল) বিধিমালা এবং সরকারি কর্মচারী বিশেষ বিধিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে পিএসসির মতামতও বেড়েছে। এ ছাড়া অ্যাডহকভিত্তিক নিয়মিতকরণের সুপারিশ, নিয়োগবিধির কাঠামো গঠন ও বিভিন্ন চাকরির শিক্ষাগত যোগ্যতার মান নির্ধারণের বিষয়গুলোও বেড়েছে।
পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিগগিরই ৩৮তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আর এই বিসিএস থেকেই বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র হলে ও উত্তর দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে ইংরেজি মাধ্যমের প্রার্থীদের জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইংরেজিতে প্রশ্ন করার বিষয়টি আগেও চালু ছিল। যোগ্য জনবলের অভাবে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার আগের পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছি। ’
‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়াবলি’ ৩৯তম থেকে : এদিকে ৩৮তম বিসিএসেও ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়াবলি’ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার বিসিএস পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়াবলি’ শিরোনামে একটি বিষয় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে পিএসসিকে জানানোও হয়েছে। পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ৩৮তম বিসিএস থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এসংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠালেও বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। পিএসসি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পিএসসিকে সাচিবিক সহায়তা দেয়। এ ছাড়া নতুন একটা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পরিবর্তন করতে হবে, যা এই স্বল্প সময়ে সম্ভব নয়। এসব কারণে ৩৯তম বিসিএস থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়াবলি চালু করা হতে পারে।
৩৮তম বিসিএসে পদ বেশি শিক্ষা ক্যাডারে : এদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি শুরুর পদে নিয়োগের জন্য ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে বা বিভাগের চাহিদা চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই দিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পিএসসিকে ৩৮তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির অনুরোধ করেছে। অনুমোদিত এই বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, এই বিসিএসে মোট দুই হাজার ৪২ জনকে ২৩টি ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে—৯৭৩ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদের সংখ্যা ৩০০।
বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে সহকারী সচিব পদে নিয়োগ পাবেন ১৭ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত দুটি ক্যাডারে লোক নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সহকারী পুলিশ সুপার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে ১০০ জনকে। বিসিএস আনসার ক্যাডারের অধীনে সহকারী পরিচালক, সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট ও ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে ৩১ জনকে। বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের সহকারী মহা-হিসাবরক্ষকের শূন্য পদ ১১টি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের বিসিএস কর ক্যাডারের সহকারী কর কমিশনারের শূন্য পদ ৯টি। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের বিসিএস সমবায় ক্যাডারের এন্ট্রি পদ সহকারী নিবন্ধক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে দুজনকে। পরিকল্পনা বিভাগের বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের সহকারী প্রধান পদে নিয়োগ পাবেন ছয়জন। দুই পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন বিসিএস পরিসংখ্যান ক্যাডারের অধীনে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিসিএস রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক এবং বিসিএস রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের অধীনে পাঁচটি পদে ১৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট পদে সাত, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী দুই, সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী এক, সহকারী সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী তিন, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দুই এবং সহকারী বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীর দুটি পদ রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিসিএস (সড়ক ও জনপথ) ক্যাডারের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে তিন এবং সহকারী প্রকৌশলী যান্ত্রিক পদে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিসিএস তথ্য ক্যাডারের সহকারী পরিচালক, তথ্য কর্মকর্তা, গবেষণা কর্মকর্তার একটি, সহকারী পরিচালক অনুষ্ঠানের ৯টি, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রকের ১৪টি এবং সহকারী বেতার প্রকৌশলীর ১১টি পদ শূন্য রয়েছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বিসিএস (বন) ক্যাডারে সহকারী বন সংরক্ষকের শূন্য পদ ২২টি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিসিএস ডাক ক্যাডারের সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেলের শূন্য পদ সাতটি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিসিএস মৎস্য ও বিসিএস পশুসম্পদ ক্যাডারের শূন্য পদ ৫২টি। এর মধ্যে খামার ব্যবস্থাপক ১০টি, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পাঁচটি, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দুটি, মাইক্রোবায়োলজিস্ট একটি, সম্প্রসারণ প্রশিক্ষক একটি, লিমনোলজিস্ট একটি, ভেটেরিনারি সার্জন বা থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিসিএস কৃষি ক্যাডারের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১৮৯ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকতা পদে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জনের ২২০টি, সহকারী ডেন্টাল সার্জনের পাঁচটি এবং বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার একটি পদে লোক নিয়োগ করা হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিসিএস খাদ্য ক্যাডারের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ও সহকারী প্রকৗশলী ই/এমের ছয়টি পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে ৩৮তম বিসিএসে। সুত্র: কালেরকন্ঠ
পাঠকের মতামত