পাহাড়, বৃষ্টিপাত, ঝর্ণা ও প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত পানি সংরক্ষণ করে বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্তত ১৫ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পানীয় জলের চাহিদা মিটছে। কক্সবাজারের টেকনাফ অঞ্চলে বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভূপৃষ্ঠের জল শোধনাগার স্থাপনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে আসছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (কক্সবাজার) সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছয় একর পুকুরের পাশে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। যে জায়গা আগে আবর্জনায় ভরা ছিল, সেটি খনন করে পুনঃস্থাপনের পর পানি পরিশোধনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বৃষ্টি ও ঝর্ণার উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানি সংরক্ষণ করে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এর মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করার পর রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করা হয়। প্ল্যান্টটি প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করছে। টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত প্রতিটি পরিবার এখন পানি শোধনাগার থেকে পানীয় ও অন্যান্য ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার জল পাচ্ছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ডিপিএইচই এবং এডিবি-র যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত ভূপৃষ্ঠের পানি শোধনাগারে পরিশোধিত পানি পরিশোধন করা হচ্ছে। ভূপৃষ্ঠে পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব থেকে এলাকাকে বাঁচানো এবং এলাকার বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ফয়েজ উল্লাহ জানান, ২০১৭ সালে প্রাণ রক্ষায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ পালিয়ে আসি। সেই সময় নয়াপাড়ায় অবস্থান নিয়েছিলাম আমরা। তখন বিশুদ্ধ পানি ও ব্যবহারের পানির খুবই সংকট ছিল। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় টিউবওয়েল কোথাও ছিল না। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে খাওয়া ও ব্যবহারের পানি আনতে হতো আমাদের। অনেক সময় পাহাড়ের খাদে গর্ত খুঁড়ে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা হতো। তবে সেই পানি বিশুদ্ধ ছিল না।
ক্যাম্প -২৬ এর বাসিন্দা আহমেদ উল্লাহ জানান, ২০২১ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পাহাড়ি ঝর্ণা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল। সেই প্রকল্প চালু হওয়ার পর আমাদের পানি সংকট চলে গিয়েছে। ক্যাম্পের সবাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে।
কক্সবাজারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃষ্টিপাত, পাহাড় ও ঝর্ণার উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানি সংরক্ষণ করে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এর মাধ্যমে বিশুদ্ধ করার পর রোহিঙ্গাদের পানি সরবরাহ করা হয়। নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাসিন্দাদের প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্যে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ডিপিএইচই কক্সবাজার।সূত্র ঢাকা মেইল