বেপরোয়া বাস এবার কেড়ে নিল এক স্কুল ছাত্রীর প্রাণ। নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সানোয়ারা ইয়াসমিন তিন্নি নামে ওই স্কুল ছাত্রীকে চাপা দেয়ার পর ড্রাইভার ও হেলপার পালিয়ে গেলেও বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি আটকে দেয়। ট্রাফিক পুলিশের থামার নির্দেশ অমান্য করে পালানোর সময় ওই স্কুলছাত্রীকে চাপা দিয়েছে বাসটি। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া মেয়েটি ঘটনাস্থলেই মারা যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গত সপ্তাহে নগরীর শাহ আমানত সেতুর টোল বক্সে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় একইসাথে ৫ জনের প্রাণ যাওয়ার ঘটনায়ও ড্রাইভারের নাগাল পায়নি পুলিশ। গতকালের দুর্ঘটনায়ও একই চিত্র। রাস্তায় লাশ পড়ে আছে। কিন্তু ড্রাইভার ও হেলপার ফেরার (পলাতক)। নিহত সানোয়ারা ইয়াসমিন চট্টগ্রাম মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। নগরীর খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ তুলাতলী এলাকার আবু আহমেদের মেয়ে।
এ বিষয়ে ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, পথচারীদের সহায়তায় বাসটি আটক করা হলেও চালক পালিয়ে গেছে। তবে আমরা তাকে ধরার জন্য অভিযান শুরু করেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই অভিযুক্ত ড্রাইভারকে আমরা আটক করতে সক্ষম হব।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী উজ্জল দত্ত জানান, বেলা দেড়টার দিকে বহদ্দারহাটমুখী ১০ নম্বর রুটের একটি বাস দুই নম্বর গেট মোড়ে এলে সেটিকে থামার সংকেত দেন একজন ট্রাফিক পুলিশ। বাসের চালক সেই নির্দেশ অমান্য করে এগিয়ে যায়। এসময় ট্রাফিক পুলিশের ওই সদস্য আবারও বাসটি থামানোর চেষ্টা করেন। তখন বাস চালক বাম দিকে মোড় নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। বাসটির বেপরোয়া গতি দেখে দুই নম্বর গেট মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীদের মধ্যে ওই স্কুলছাত্রী দৌঁড়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে বলেও জানান উজ্জল দত্ত। তিনি আরো বলেন, এসময় বাসটি আবার ডানে সরে এগিয়ে যেতে চাইলে ছাত্রীটি বাসের নিচে চাপা পড়ে।
বাস চাপায় ওই স্কুলছাত্রী মাথায় গুরুতর আঘাত পান বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত আলাউদ্দিন তালুকদার । হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বেলা ৩টার দিকে নিহত ছাত্রীরা স্বজনরা চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। এসময় নিহত ছাত্রীর আত্মীয় স্বজন ও সহপাঠি এবং শিক্ষকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা ড্রাইভার ও হেলপারকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে কড়া শাস্তি দেয়ার আবেদন জানান প্রশাসনের কাছে।
এদিকে তিন্নির ভাই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন রাজু বলেন, আমরা তিনভাই তিন বোনের মধ্যে তিন্নি সবার ছোট। প্রতিদিনের মতো সে স্কুল থেকে ফিরছিল। রাস্তায় দাঁড়ানো তিন্নির পাশে তার সহপাঠিরাও ছিল। তিনি আরো জানান, তার পিতা অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা। মা গৃহিনী। নামাজে জানাজা শেষে তাকে গরীবুল্লাহ শাহ মাজারস্থ কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে রাত ১০টার দিকে। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো পরিবারে।
পাঠকের মতামত