বাংলাদেশের আইনে না থাকায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নিবন্ধন পায় না। তবে রবিবারের এক সিদ্ধান্তের পর থেকে জানা যায়, সরকার এখন নতুন আমদানি করা ইলেকট্রিক কারের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) দেবে। মূলত কার্বন ও শব্দদূষণ কমাতে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে সরকার। এসব গাড়ির চার্জিং সুবিধার্থে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে চার্জিং স্টেশন। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- আজহারুল ইসলাম অভি
বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের জোয়ার উঠেছে। টেসলা, রিভিয়ান, এনআইও’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। জাগুয়ারসহ বিশ্বের বড় বড় গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি এরই মধ্যে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশও আর এই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে নেই। বর্তমানে বিশ্বের অনেকের মতো বাংলাদেশও আধুনিক প্রযুক্তির বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জগতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যাটারি তথা বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বাজারে আনার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
ইতোমধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পরিবেশ দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ রোধে ইলেকট্রিক কারই হবে ভবিষ্যতের বাহন। চীন পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসচালিত গাড়ির বদলে ইলেকট্রিক কারকে উৎসাহিত করছে। দেশটিতে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট গাড়ির অর্ধেক হবে বিদ্যুৎচালিত। গত রবিবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আসা মতামত যোগ করে ভেটিং শেষে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত হয়।
এর নাম ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা।’ যুক্তরাজ্যের সড়কে তেলের পাম্পের মতো গাড়ি চার্জ করার স্টেশন গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও চার্জিং স্টেশন থাকবে। এজন্য এর আগে ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য চার্জিং নীতিমালা করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এক খবরে জানা যায়, আসছে বছর দেশের রাস্তায় দেখা মিলবে বৈদ্যুতিক গাড়ির। সামনের বছর বাজারে আসছে ‘পালকি’ নামের বৈদ্যুতিক গাড়ি। বাংলাদেশে অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রির অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বদেশি স্টার্টআপ ‘পালকি মোটরস’। চলমান স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ‘পালকি মোটরস’ তাদের নিজস্ব সংযোজিত বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে। গাড়িটিতে রয়েছে চার দরজা, চার চাকা।
বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে কারখানাও স্থাপিত হয়েছে। কারখানাটি তৈরি হয়েছে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে। এটি এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। ৩০ হাজার একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুত করতে ১০০ একর জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে কারখানার কাজ। চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিকে অংশীদার করে দ্রুতই দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি আনতে চায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। বাংলাদেশে গাড়ি তৈরির এ কারখানায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের অংশীদার চীনা প্রতিষ্ঠান ডংফেং মোটর গ্রুপ লিমিটেড। এটি চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতার একটি। জাপানের হোন্ডা, নিশান, ফ্রান্সের সিটরয়েনসহ জাপানি ও ইউরোপীয় কয়েকটি গাড়ি নির্মাতার সঙ্গে তাদের যৌথ উদ্যোগের কারখানা রয়েছে।
নরওয়ে, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোতেও দ্রুত বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার হার। বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনায় ৫ বছর আগের হিসাবে সুবিশাল বাজার রয়েছে বর্তমানে চীনে, যার হার প্রায় ২৮ শতাংশ। বাংলাদেশেও এর বিশাল বাজার রয়েছে। বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা আছে কিনা, তা যাচাই করতে দেশজুড়ে একটি জরিপ করে অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। তাতে বেশ কয়েকটি পেশার ওপর জরিপটি চালিয়ে দেখা গেছে, দেশের বাজারে চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারজাত করে যে কোনো কোম্পানি সফল হতে পারবে। তা ছাড়া দেশে চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। তাতে বাজারের আকারও বড় হচ্ছে।
মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি চাইলে চার চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ি ব্যবহার করতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ বলছে, কারখানায় গাড়ি সংযোজন নয়, সরাসরি উৎপাদন করা হবে। গাড়ির ৭০ শতাংশই কারখানায় উৎপাদিত হবে, বাকি ৩০ শতাংশ হবে সংযোজন। বৈদ্যুতিক গাড়ি হবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের। গাড়িগুলোর নকশা এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে খুব সহজে এ দেশে ব্যবহার করা যায়। বিদ্যমান জাপানি ও কোরিয়ান গাড়ির নকশা যেভাবে করা, সেভাবেই এ দেশে গাড়ির নকশা করা হচ্ছে। নকশা তৈরির ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের কথাও মাথায় রাখা হয়। যাতে স্বচ্ছন্দে গাড়ি ব্যবহার করা যায়।