মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে আবারও সকাল থেকে বোমা ও গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্ত। উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে মিয়ানমারের গুলি ও বোমার শব্দ থেমে থেমে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে নাফ নদী হয়ে বাংলাদেশের প্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সীমান্তে কড়া পাহারায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড। তারপরও শনিবার টেকনাফে ভিড়েছে গুলিবিদ্ধ এক নারীসহ পাঁচ রোহিঙ্গা। এরপর শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই জেটি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই মিয়ানমার। সেখানে আহতরা এখনও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয়রাও চায় না, আর কোনো রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় পাক।
স্থানীয়রা বলছে, মিয়ানমারের গুলি ও বোমার শব্দ থেমে থেমে পাওয়া যাচ্ছে। হতাহতরা অনেকেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে আশ্রয় নিতে চাচ্ছে। তবে আর কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত হবে না।
টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে পুলিশও। তারা বলছে, কোনো দালালের প্ররোচনায় রোহিঙ্গা যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকে কড়া নজরদারি রয়েছে।
টেকনাফ সার্কেলের (উখিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল জানান, গতকাল রোববার মিয়ানমার থেকে গুলিবিদ্ধ এক নারীসহ পাঁচ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে। এ বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে। এভাবেই যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি ও পুলিশ সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
টেকনাফ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির সদস্য সোনা আলী বলেন, ‘কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত হয়ে মিয়ানমার অংশে আবারও গোলাগুলি হচ্ছে। শুক্রবার রাতভর শান্ত থাকলেও শনিবার সকালে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত গুলির শব্দ শোনা যায়। থেমে থেমে গুলির শব্দ হওয়ায় অনেকটা আতঙ্কে রয়েছে সীমান্ত পাড়ের মানুষ। শনিবার বিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে কাঠের নৌকায় করে শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে এসেছে এক নারীসহ পাঁচ রোহিঙ্গা।’
নাফ নদী দিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াতের পর্যটকবাহী জাহাজগুলো এখন বন্ধ আছে। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে মাছ ধরাও। সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই নাফ নদী ভাগ করেছে দুই দেশকে। ওপারে মিয়ানমার। সেখানে চলছে গৃহযুদ্ধ।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে যুদ্ধ জোরালো করেছে আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী কয়েকটি গোষ্ঠী। এতে বাংলাদেশ সীমান্তেও উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে এ সংঘাতের কারণে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাতে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর ৩৩০ সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। নির্মমভাবে দমন করা হয় বিক্ষোভকারীদের। জবাবে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় গণতন্ত্রকামীরা। বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় তারা। পাশাপাশি আরাকান আর্মি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও ট্যাঙ্গ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি নিয়ে গঠিত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। গত তিন বছরের গৃহযুদ্ধে তিন শর বেশি সেনা চৌকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চীন রাজ্যে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটি বলছে, রাখাইনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সেনা সদরদপ্তরের দখল নিয়েছে তারা। ২০২২ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশ সীমান্তে। তখনও কিছু গোলা এসে পড়ার ঘটনাও ঘটে।