মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের যে ওষুধ খাওয়ানোর কথা তা খাওয়ানো হচ্ছে মুরগীদের। ভাবুন একবার। মুরগীকে খাওয়ানো হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কলিসটিন ওষুধ। যে কলিসটিন ওষুধ সাধারনতঃ খাওয়ানো হয় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের। এমনই ভয়ংকর রিপোর্ট বের করেছে ভারতের The Bureau of Investigative Journalism- অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ব্যুরো।
কী হয় কলিসটিন ওষুধ শরীরে গেলে?
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে কলিসটিন একটি শক্তিশালি অ্যান্টিবায়োটিক। কলিসটিন ওষুধ শরীরে গেলে তা যে কোনো ড্রাগ প্রতিরোধের কাজ করে। অর্থাৎ কলিসটিন ওষুধ শরীরে গেলে আর কোনো ওষুধই আপনার শরীরে কাজ করবে না। এই কলিসটিন ওষুধটাই ড্রাগ প্রতিরোধকের কাজ করবে।
হায়দ্রাবাদের রঙ্গারেড্ডি জেলার বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্মে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে মুরগীদের কলিসটিন ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। যে ওষুধ মরণাপন্ন রোগীদের শেষ আশা বলে খাওয়ানো হয়।
কলিসটিন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে মুরগী সুস্থ থাকে, ওজন বাড়ে তাড়াতাড়ি। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে কলিসটিন ওষুধ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। WHO এর তরফ থেকে এই কলিসটিন ওষুধ মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীকে খাওয়ানোর ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। আর আইন ভেঙে সেই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে মুরগীকে।
মুরগীর মাধ্যমে এই ওষুধ মানুষের শরীরে গেলে শরীরের মধ্যে ড্রাগ প্রতিরোধক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হবে। তারপর, আর কোনো অ্যান্টি-বায়োটিক ওষুধেই কোনো কাজ হবে না। ফলে ওষুধ খেয়ে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাই হারিয়ে যাবে মানুষের। ভয়ংকর এক বিপদের সামনে হাজির ভারতবাসী। শুধু ভারত নয় ভারতের মুরগী যায় যেসব দেশে সেসব দেশের মানুষও একই বিপদে।
ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক মানবদেহে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কলিস্টিনকে ডাক্তারকে শেষ ভরসা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু এবার যদি সেটিও মানবদেহে অকার্যকর হয়ে পড়ে তাহলে ভয়াবহ অ্যান্টিবায়োটিক সংকটে পড়বে বিশ্ব।
রিপোর্ট বলছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার টন কলিসটিন ওষুধ ভিয়েতনাম, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়াতে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালে কয়েক লাখ টন কলিসটিন ওষুধ এসেছে ভারতে। তার পুরোটাই ব্যবহার করা হচ্ছে পশু পাখিদের শরীরেই। ভারতের বেশ কিছু কোম্পানি প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপণও করে কলিসটিন ওষুধের। যেটা অত্যন্তঃ বিপদজনক।
ভারতে দুটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এই কলিসটিন ড্রাগ উৎপাদন করে। কিন্তু ভারত প্রায় ১৫০ টন এই ওষুধ বাইরের দেশ থেকে নিয়ে আসে বলেই রিপোর্টে প্রকাশ। ২০১৬ তে এই আমদানির পরিমাণ হাজার টন ছুঁয়েছে বলেই রিপোর্টে প্রকাশ।
ভেঙ্কি কোম্পানী এই কলিসটিন ওষুধের বিজ্ঞাপন করে। তারাই আবার কেএফসি ও ম্যাকডোনাল্ডে মুরগীর মাংস সাপ্লাই করে। The Bureau of Investigative Journalism এর রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে যে, তারা বিনা প্রেসক্রিপশনে ভেঙ্কি স্টোর থেকে কলিসটিন ওষুধ নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি তারা একটি পোলট্রি খাবারের দোকান থেকেও বিনা প্রেসক্রিপশনে ভেঙ্কির স্ট্যাম্প মারা প্যাকেটে কলিসটিন ওষুধ পেয়েছে।
যদিও ভেঙ্কির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, কলিসটিন ওষুধ বিক্রি করে তারা কোনো অপরাধ করে নি বা আইন ভাঙেনি। তাদের তরফ থেকে এও দাবি করা হয়েছে তারা যে চিকেন ম্যাকডোনাল্ড, পিজ্জাহাট, ডমিনোস বা কেএফসিতে বেচে তাতে কলিসটিন ব্যবহার করা হয় না।
ড্রাগ প্রতিরোধক ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রতিবছর বিশ্বে ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০৫০ সালের মধ্যে সেই মৃত্যুর হার গিয়ে পৌঁছাবে প্রায় ১ কোটিতে। যার মধ্যে এশিয়া মহাদেশেই প্রায় ৫০ লাখ মৃত্যু হবে প্রতিবছর।
রিপোর্টে বলছে, কলিসটিন অ্যান্টিবায়োটিক শুধু মুরগীর নয়, ছড়িয়ে পড়ছে পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করা মানুষের শরীরেও। চিকেন খাবারের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ শরীরে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের মানুষ শরীরে প্রতিরোধক সৃষ্টি করা নিয়ে গবেষণা করা টিমোথি ওয়ালশ জানিয়েছেন, এই ওষুধ মরণাপন্ন রোগীদের শরীরে ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধ কোনরকমেই মুরগীর বা অন্য কোনো পশুপাখীর শরীরে ব্যবহার করা উচিত নয়।
উন্নত দেশগুলিতে ইতিমধ্যেই কলিসটিন জাতীয় ড্রাগগুলিকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু সেই ওষুধই পশু পাখির খাদ্য হিসাবে ভারত সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে রপ্তানি করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে ক্ষতির সামনে পড়ছেন ভারতের মত গরীব দেশের কোটি কোটি মানুষ।