নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রার্থী মনোনয়নের মধ্য দিয়ে সব আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির। এর আগে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিনে চূড়ান্ত করা হয় অন্য ছয় বিভাগের প্রার্থীর নাম।
আজ রোববার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। বিকেল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৩০০ আসনের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর পর সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হবে। এতে মনোনয়ন-পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে আজ সকালে গণভবনে ৩ হাজারের বেশি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীকে মতবিনিময়ে ডেকেছেন দলটির সভাপতি। সেখানে দল ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ব্যাপারে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি। সব দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে টানা চতুর্থবারের মতো দলকে ক্ষমতায় আনতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি নির্বাচনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনাও দেওয়া হবে।
এদিকে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে চলছে নানা গুঞ্জন। কাকে কোন আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়েছে তা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। যদিও প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কঠোর গোপনীয়তা নিয়েছে। তবু অনেক আসনে নিশ্চিত হওয়া প্রার্থীদের নাম প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। অযোগ্যতা, অদক্ষতা, জনপ্রিয়তা হারানো, দুর্নীতি-অনিয়ম, দলীয় কোন্দলে জড়ানোসহ নানা কারণে আওয়ামী লীগের বর্তমান ২৫৯ এমপির মধ্যে অন্তত ৩০ জন বাদ পড়েছেন। তাদের বদলে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে হেভিওয়েট নেতা ও সাবেক এমপিদের অনেককেই। তারকাজগতের কয়েকজনসহ প্রার্থী করা হয়েছে তরুণদেরও।
এই অবস্থায় জোট ও মহাজোট নিয়েও দলের মধ্যে চলছে নানা ভাবনা। এখন ৩০০ প্রার্থী চূড়ান্ত করে রাখা হলেও পরে সমঝোতা হওয়া আসনগুলো থেকে দলীয় প্রার্থী সরিয়ে নেওয়া হবে। ১৪ দল ও মহাজোট শরিকসহ নতুন করে যুক্ত হওয়া নির্বাচনী মিত্রদের ২৫-৩০টি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের ছাড়া হতে পারে ৩০-৩৫ আসন। জোটগত সমঝোতার বিষয়ে মিত্র দলগুলোর বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ১৪ দলের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদেরও বৈঠকে ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ রোববার কিংবা কাল সোমবার এই বৈঠক হওয়ার কথা।
অবশ্য জোট-মহাজোটগত নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গতকালের বক্তব্যে কিছুটা হলেও ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘জোটের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জোট একটি জোটের বিপরীতে হয়। সে ক্ষেত্রে জোটের প্রয়োজন না পড়লে কেন জোট করতে যাব?’ জোট ও মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার এমন বক্তব্যে অন্য শরিক ও মিত্র দলের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি উদ্বেগও দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের তৃতীয় দিনের বৈঠকে গতকাল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ৭৭ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। প্রথমে সিলেট বিভাগের ১৯টি এবং পরে চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। এদিনও মনোনয়নের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন পুরোনো এমপিকে বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রথম এবং শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে ছয়টি বিভাগের ২২৩ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। এর মধ্যে প্রথম দিনে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭২টি এবং দ্বিতীয় দিন দুই দফায় খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের ১৫১টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।
মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফরউল্লাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, রশিদুল আলম ও ডা. দীপু মনি।
তৃতীয় দিনের বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়া চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের নামও প্রকাশ করা হয়নি। তবে দলীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে অনেক আসনে প্রার্থীর নাম জানা গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বদলে তাঁর ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেলকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এবার বয়সজনিত কারণে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মনোনয়ন চাননি। চাঁদপুর-২ আসনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম মনোনয়ন পেয়েছেন। মায়া এই আসনের সাবেক এমপি।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-২ আসনে খাদিজুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম-৩ আসনে মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-৪ আসনে এসএম আল মামুন, চট্টগ্রাম-৬ আসনে এ বি এম ফজলে করিম, চট্টগ্রাম-৭ আসনে ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ আসনে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, কক্সবাজার-২ আসনে আশেক উল্লাহ রফিক, রাঙামাটি আসনে দীপঙ্কর তালুকদার, বান্দরবান আসনে বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, খাগড়াছড়ি আসনে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সিলেট-১ আসনে ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-২ আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমান, সিলেট-৪ আসনে ইমরান আহমদ, সিলেট-৬ আসনে নুরুল ইসলাম নাহিদ, সিলেট-৫ আসনে মাসুক উদ্দিন আহমদ, মৌলভীবাজার-১ আসনে শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ আসনে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মৌলভীবাজার-৩ আসনে নেছার আহমদ, মৌলভীবাজার-৪ আসনে উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, হবিগঞ্জ-১ আসনে অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, হবিগঞ্জ-২ আসনে আবদুল মজিদ খান, হবিগঞ্জ-৩ আসনে আবু জাহির, হবিগঞ্জ-৪ আসনে মাহবুব আলী, সুনামগঞ্জ-১ আসনে অ্যাডভোকেট রঞ্জিত চন্দ্র সরকার, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এম এ মান্নান ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মুহিবুর রহমান মানিক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাদ পড়ছেন বেশ কিছু এমপি
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছু আসনের বর্তমান এমপিরা বাদ পড়েছেন। এই সংখ্যা ৩০ জনের কম হবে না। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন– পঞ্চগড়-১ আসনে মজহারুল হক প্রধান, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে অধ্যাপক মেরিনা জামান কবিতা, মাগুরা-১ আসনে সাইফুজ্জামান শিখর, যশোর-২ আসনে নাসির উদ্দিন, বরিশাল-২ আসনে শাহে আলম, বরিশাল-৪ আসনে পংকজ নাথ, ঢাকা-১০ আসনে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ঢাকা-১৩ আসনে সাদেক খান, সুনামগঞ্জ-১ আসনে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সিলেট-৫ আসনে হাফিজ আহমেদ মজুমদার, হবিগঞ্জ-১ আসনে গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী, চাঁদপুর-২ আসনে নূরুল আমিন রুহুল, জামালপুর-৫ আসনে মোজাফফর হোসেন, নেত্রকোনা-১ আসনে মানু মজুমদার, টাঙ্গাইল-৫ আসনে সানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৩ আসনে আতাউর রহমান খান, রাজশাহী-১ আসনে মো. ফারুক চৌধুরী এবং কুড়িগ্রাম-১ আসনে আছলাম হোসেন সওদাগর।
এদিকে, ফরিদপুর-১ আসনে মঞ্জুর হোসেন বুলবুলের বদলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও এই আসনের সাবেক এমপি আবদুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নেত্রকোনা-২ আসনে ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীকের বদলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। বুলবুল ও বেলাল অবশ্য এবার দলীয় মনোনয়ন চাননি। এ ছাড়া ঢাকা-৫ আসনের বর্তমান এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর বদলে এই আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজলকে প্রার্থী করা হয়েছে।
অসুস্থতার কারণে নির্বাচন করতে সম্মত না হওয়ায় রংপুর-৫ আসনের বর্তমান এমপি এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রাসেক রহমানকে এবার প্রার্থী করা হচ্ছে। একই কারণে ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বদলে তাঁর ছেলে ইরফান সেলিমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এবার অবশ্য হাজী সেলিম এবং তাঁর দুই ছেলেই দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
এ ছাড়া কুড়িগ্রাম-১ আসনে আছলাম হোসেন সওদাগর ও রাজশাহী-৪ আসনে প্রকৌশলী এনামুল হকও বাদ পড়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এনামুল হক আবারও দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
কেন তারা এবার বাদ পড়লেন?
মনোনয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এর আগে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি দলীয় সংস্থার মাধ্যমে সব আসনে জরিপ করিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই জরিপের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা হারানো ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠা, অদক্ষতা, দলীয় কোন্দল, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত এমপিদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থতা ও বয়সজনিত কারণেও কেউ কেউ বাদ পড়ছেন।
অন্যদিকে, জরিপে সব সম্ভাব্য প্রার্থীর দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা, করোনাকালে সংকটসহ অতীত অবদান, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা, দলীয় ভোটারসহ মোট ভোটারের মধ্যে জনপ্রিয়তা, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িত কিনা এবং সবল বা দুর্বল দিক এসব বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আসনভিত্তিক প্রার্থীর মধ্যে ১০০ নম্বরের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন, তাঁকেই এবার দলীয় প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, যাদের জনপ্রিয়তা নেই, কিংবা জয়ী হতে সক্ষম নন, তারাই বাদ পড়েছেন। একইভাবে তুলনামূলক বেশি জনপ্রিয় ও জয়লাভে সক্ষম ব্যক্তিকে দল প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তার আগের সংসদের ৫৬ এমপি দলীয় মনোনয়ন পাননি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার আগের সংসদের ৪৯ জনকে (মন্ত্রীসহ) মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ।
কার কত আসন, সমঝোতার প্রক্রিয়া
৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি শেষ ধাপে থাকলেও একটা পর্যায়ে ৬০-৬৫টি আসন অন্য দলকে সমঝোতার মাধ্যমে ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে ১০-১২টি আসন দেওয়া হতে পারে। বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির তিন, জাসদের তিন, জাতীয় পার্টি-জেপির এক এবং তরীকত ফেডারেশনের একটি আসনের সঙ্গে আরও ২-৪টি আসন নতুন করে ছাড় দেওয়ার আলোচনা চলছে। তবে এই চার শরিকের বাইরে অন্য ৯টি শরিক দলের প্রতিটিকে একটি করে আসন ছাড়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলে দলগুলোর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে।
১৪ দলের বাইরে মহাজোট শরিক বিকল্পধারা বাংলাদেশকে ২-৩টি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। গত নির্বাচনে তিনটি আসনে ছাড় পেলেও দুটি আসনে জিতেছিল দলটি। এ ছাড়া নতুন নির্বাচনী মিত্র তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বিএনএফসহ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতা হওয়ার আলোচনা রয়েছে। এসব দলকে কমবেশি ১৫-১৮টি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের ৩০-৩৫টি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে। যদিও এর আগে থেকেই জাতীয় পার্টি এককভাবে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়ে আলাদাভাবে প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে।
সূত্রমতে, জোট ও মহাজোটের সব শরিক দলই আলাদাভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। যেসব আসনে সমঝোতা হবে, সেগুলোতে নৌকা এবং অন্য অনেক আসনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে তারা। আর জাতীয় পার্টি সমঝোতা হলেও সব আসনেই দলীয় লাঙ্গল প্রতীকে ভোটের মাঠে থাকবে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় আজ
আজ রোববার সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মনোনয়ন ফরমের রিসিভ কপি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন ফরমের ফটোকপিসহ সভায় উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ৩০০ আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৬২টি।
১৪ দল শরিকদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি
আজ রোববার ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠকের প্রস্তুতিও রয়েছে। গণভবনে সকাল থেকে শুরু দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ করে সময় দিতে পারলে আজই এই বৈঠক হতে পারে। অন্যথায় আগামীকাল সোমবার জোট শরিকদের সঙ্গে বৈঠকটি হতে পারে।
১৪ দলের শরিক দলের একাধিক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শরিক দলগুলোর নেতাদের ফোন করে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালেই শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তুলবেন তারা। দলীয় প্রার্থী তালিকাসহ কাঙ্ক্ষিত আসন সংখ্যা নিয়েও আলোচনা হবে। তবে কাকে কোন আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সেটি সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ তথা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে।
ওবায়দুল কাদের যা বললেন
শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়ে এসেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক দলের নেতাদের সঙ্গে আগামী নির্বাচন ও দলীয় মনোনয়ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। এর পর সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের জানান, আওয়ামী লীগের জোট শরিকদের মনোনয়ন-সংক্রান্ত বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মনোনয়নের ব্যাপারে শরিকদের কথা এখনই আমরা ভাবছি না। যাদের জনপ্রিয়তা আছে, তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নতুন-পুরোনো মিলিয়েই আমরা মনোনয়ন দিচ্ছি। যেখানে পুরোনোরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন, সেখানে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। ইলেকট্যাবল ক্যান্ডিডেট যারা, সেটাই হচ্ছে বিচারের মানদণ্ড। এ ছাড়া কতজনকে বাদ দেব, কতজন রাখব– ধরনের সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। আমাদের মাথায় রয়েছে কাকে দিলে আমাদের দল নির্বাচনে জনগণের কাছে অধিকতর যোগ্য হবে। সুত্র: সমকাল