বিশ্বের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। গত ২ বছর ধরে ক্রমাগত ভাঙ্গনের মাত্রা বাড়তে থাকলেও সৈকত রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেয়া প্রকল্প আটকে আছে গত ২ বছর ধরে। ৩ হাজার ৪১০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত মাল্টি ফাংশানাল বাঁধ কাম রোড প্রতিরক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এটি কবে নাগদ অনুমোদন পাবে এটাও নিশ্চিত নন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভাঙ্গন রোধে ক্ষতির মাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে প্রায় ৪ বছর আগে। কিš‘ সম্প্রতি এ ভাঙ্গন তীব্র রূপ নিয়েছে। এতে পর্যটকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা এলাকা সমুদ্রের ঢেউয়ের তান্ডবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা ইনস্টিটিউটের (ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস) সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠে উ”চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে ঘনঘন নি¤œচাপের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বড় বড় ঢেউ উপক‚লে শক্তিশালী হয়ে আছড়ে পড়ছে। উচ্চ শক্তির এই ঢেউ উপক‚লের বালু সরিয়ে দেওয়ায় সৈকতে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় সমুদ্র স্রোতের প্রকৃতি ও ঢেউয়ের তীব্রতা অন্যরকম বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া মানবঘটিত কারণে উপক‚লীয় অঞ্চলে ভাঙ্গন হতে পারে।’ বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভূ-তাত্ত্বিক ওশানোগ্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া বলেন, ‘এখন বর্ষাকাল। মূলত, বর্ষাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকে। প্রকৃতিক নিয়মে সমুদ্র একদিকে ভেঙে অন্যদিকে ভরাট হয়। এটি সমুদ্রের নিয়ম। কিš‘, এবছর সমুদ্র উপক‚ল বেশি ভাঙছে এবং ভেঙে যাওয়ার চিত্রটি বেশি।’ কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তুহিন জানান, সৈকতে তিনি ব্যবসা করছেন গত ২০ বছর ধরে। সর্বশেষ ৪ বছরে ভাঙ্গন ক্রমাগত বাড়তে আছে। যা ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এটা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতি আরো বাড়বে। ভাঙ্গন পরিস্থিতি দেখতে গত ১২ আগস্ট পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার এসেছিলেন। ওসময় সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘সমুদ্রসৈকতের ভাঙন ঠেকাতে একনেকে তিন হাজার ১৪০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প জমা দিয়েছি। নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ হবে। তখন হয়তো সাগরের ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে কক্সবাজার।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, সৈকতের ভাঙ্গন রক্ষায় মাল্টি ফাংশানাল বাঁধ কাম রোড প্রতিরক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়ে ছিল ২০২০ সালে। যেটি আটকে আছে গত ২ বছর ধরে। ২ হাজার ৫ শত কোটি টাকার ব্যয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সংশোধিত হয়ে ৩ হাজার ৪১০ কোটি টাকায় উন্নত করা হলেও এখনো আলোর মুখ দেখে নি। প্রকল্পটি ১২ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে। যা শহরের নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে কলাতলী মুল পয়েন্ট পর্যন্ত। যেখানে ওয়াকওয়ে, সাইকেল বে, গাড়ি পাকিং, প্রদর্শনী মঞ্চ থাকবে। আর বাঁধের ভেতরে থাকবে কিডস জোন, তথ্য কেন্দ্র, লকার রুম, লাইফ গার্ড পোষ্ট, ওয়াশরুম। পুরো প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে দৃষ্টি নন্দনভাবে। বালিয়াড়িতে থাকবে না কোন প্রকার স্থাপন। সকল প্রকার স্থাপনে চলে যাবে বাঁধের অভ্যন্তরে। প্রকল্প মতে, ১২ কিলোমিটার মাল্টিফাংশনাল বাঁধ কাম রোডটি থাকবে ৫ কিলোমিটার সাইকেল বে, ৪.৮০ কিলোমিটার ওয়ার্কি বে, ৮ টি ফুটওভার ব্রীজ, ৭ শত সিটিং ফ্যাসিলিটি, ১ টি ল্যান্ডস্কেপ, ১ টি প্রদর্শনী স্থান, ১০ টি তথ্য কেন্দ্র, ১ টি শিশু পার্ক, ১ টি বাস পার্কিং স্থান, ১ টি আলোকসজ্জা, ১ টি ইটিপি সমৃদ্ধ পানি ব্যবস্থপনা, ১ টি একুইরিয়াম, বাইরের রেঁস্তোরা ১ টি, ১৮টি লাইভ গার্ড স্টেশন, ১০ টি ভাস্কর্য। পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, ভাঙ্গন রোধে পর্যটন এবং পরিবেশ বান্ধন প্রতিরক্ষা বাঁধ নিমার্ণ প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে জমা রয়েছে। এটি অনুমোদন পেলে একনেকে উপস্থাপন হবে। তবে বলা যাবে এই কাজ কখন শুরু করা সম্ভব হবে।