নোয়াখালীর ভাসানচরের আশ্রয়শিবির থেকে কৌশলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাচ্ছেন! প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাওয়ার বাহানা, পড়াশোনা করার আগ্রহসহ নানা কারণে তারা ভাসানচর ছাড়ছেন। পালিয়ে তারা দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে আসছেন বলে জানিয়েছেন পালিয়ে আসা একাধিক রোহিঙ্গা।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে ভাসানচর থেকে কক্সবাজার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার পথে আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকত এলাকা থেকে ২৫ রোহিঙ্গাকে আটক করে কোস্টগার্ডকে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
nagad
nagad
আটক রোহিঙ্গারা হলেন, আলী জহুর (৩৯), সৈয়দা খাতুন (২৮), শাহীদা (১৮), জান্নাত আরা (১৩), মাজেদা (১১), নুর কিয়াম (০৮), এনামুল হাসান (০৭), মাহমুদুল হাসান (০৬), নূরা ইদ্রীস (০৫), ইয়াসমিন (২ মাস), মো. ফারুক (২৬), শেহেবা বেগম (২৩), বিনাজ বিবি (০৪), মো. ছিদ্দিক (৬৮), রেহেনা বেগম (৫৭), রোমিনা (১৫), আবু বক্কর ছিদ্দিক (০২), মোমিনা (০১), নূর বানু (১৪), ইসমত আরা (১৩), আনোয়ার সাদেক ( ১২), আনোয়ার সালাম (১১), আনোয়ার হোসেন (১০), মো. ফারুক (১৭) ও আব্দুল হাফেজ (১৮)।
তাদের মধ্যে তিন পরিবারের ২৩ জন রয়েছেন। ১২ শিশু-কিশোর, আট নারী এবং পাঁচজন পুরুষ বলে জানিয়েছে কোস্টগার্ড।
KSRM
KSRM
রোহিঙ্গা যুবক আলী জহুর (৩৯) বলেন, ‘২০১৭ সালে আমরা বাংলাদেশে আসি। ওই সময় আমি শরীরে ব্যথা পাই। এরপর আমাদের ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে আমার পাঁচ মেয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সেখানে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ঠিকই; কিন্তু ছেলে-মেয়েদের সব প্রয়োজন পূরণ হয় না। যার কারণে আমরা কক্সবাজার ক্যাম্পে চলে যাচ্ছি। কারণ ওখানে আত্মীয়-স্বজন রয়েছে।’
মেয়ের স্বর্ণ বিক্রির টাকায় নৌকা ভাড়া করে ভাসানচর থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পালিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।
আব্দুল হাফেজ নামে একজন রোহিঙ্গা কিশোর বলেন, ‘জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আমরা ভাসানচর থেকে বোটে করে পারকিতে এসে নেমেছি। আমি একজন কোরআনে হাফেজ। আমার সাথে ফারুক নামে আরও একজন আছে। সেও কোরআনে হাফেজ। কোনো মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার ইচ্ছায় আমরা ভাসানচর থেকে পালিয়েছি।’
জানা যায়, ভাটা কিংবা শীত মৌসুমে সন্দ্বীপ ও ভাসানচরকে বিচ্ছিন্ন রাখা সরু চ্যানেলটি প্রায় শুকিয়ে যায়। এ সময় হাঁটু থেকে বুকসম পানি পার হয়ে ভাসানচর থেকে সন্দ্বীপে চলে আসেন অনেক রোহিঙ্গা। বিভিন্ন সময় মাছ ধরতে যাওয়া কিছু জেলে ও মাঝি টাকার বিনিময়ে তাঁদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়া বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে পুনরায় ভাসানচরে দিয়ে আসা হয় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পারকি সমুদ্রসৈকত এলাকার বাসিন্দা নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কিছু লোকজন বোট থেকে নেমে পারকির চরে উঠেন। জামা কাপড় ভেজা দেখে সন্দেহ হওয়ায় তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করা হয়। এ সময় তারা প্রথমে নিজেদের কক্সবাজারের বাসিন্দা জানালেও পরবর্তীতে স্বীকার করেন, তারা ভাসানচর থেকে পালিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছেন। এ সময় খবর দিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
কোস্টগার্ড নরম্যান'স পয়েন্টের ইনচার্জ রাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি থানায় এবং আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের আবার ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে; না হয় কক্সবাজার ক্যাম্পে পাঠানো হবে ‘
বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহসিন জানান, আটক রোহিঙ্গারা কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। এদের বিষয়ে কোস্টগার্ড সিদ্ধান্ত দেবে।