ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজের ছাত্র ডা. লোটে শেরিং। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এসে বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন এবং ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এফসিপিএস কোর্স সমাপ্ত করেন। ডা. লোটে শেরিং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এমন সংবাদে খুবই গর্ববোধ করছেন তার সহপাঠীরা।
মমেক এর সহপাঠী ডা. আসাদুজ্জামান রতন জানান, লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস এ ভর্তির পর আমরা বাঘমারা মেডিকেল হোস্টেলে পাশাপাশি ভবনে থাকতাম। মেধাবি ও খুবই নম্র-ভদ্র স্বভাবের লোটে শেরিং থাকতো নতুন ভবনে। প্রতিদিনের পড়াশুনার কাজ প্রতিদিন শেষ করতো। ছাত্র জীবন থেকে সে খুবই বন্ধুসুলভ তবে কম কথা বলতো। পড়াশুনার পাশাপাশি টেবিল টেনিস ও ক্যারাম খেলা পছন্দ করতো সে।
ডা. রতন জানান, লোটে শেরিং ও আমি প্রফেসর ডা. খাদেমুল ইসলামের অধীনে জেনারেল সার্জারি বিষয়ে ৬ মাস ইন্টার্নশিপ করি। পরে সে ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এফসিপিএস কোর্স সমাপ্ত করে। ডা. লোটে শেরিং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন জেনে খুবই গর্ববোধ করে তিনি বলেন, যোগ্য মানুষ দেশ পরিচালনার আসলে সুযোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়, এতে তার দেশ আরো এগিয়ে যাবে।
আরেক সহপাঠী ডা. শফিকুল বারী তুহিন জানান, সেশন জট থাকায় আমরা মমেক থেকে ১৯৯৮ সনে পাস করি। সে ২০০৩ সন পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিল।
তুহিন আরও জানান, তৎকালীন সময়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ১২/১৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএস এ পড়াশুনা করতো। তন্মধ্যে ডা. লোটে ছিলো শেরিং খুব মেধাবী। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ে সে বন্ধুদের গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে যেত। বিভিন্ন সময় আলোচনার ফাঁকে দেশে গিয়ে রাজনীতি করবে বলেও জানিয়েছিল সে।
জানা যায, ২০১৩ সালে সিভিল সার্ভিস থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভুটানে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে তার রাজনৈতিক ডিএনটি দল জয়লাভ করে চমক সৃষ্টি করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে প্রথম দফা নির্বাচনে হেরে যান। অবশ্য তিনি পরাজয় মেনে নিয়েছেন।
ডা. লোটে শেরিং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে ১৮ অক্টোবর। ভুটানে দুই দফায় ভোট হয়। প্রথম দফায় ভোটাররা রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেয়। দ্বিতীয় দফায় অর্থাৎ ডা. লোটে শেরিং মুখোমুখি হবেন ডিপিটির ফেনসাম সগবার। কিন্তু ইতোমধ্যে বিপুল ভোটে ডা. লোটে শেরিংয়ের ডিএনটি জয়ী হয়েছে।
রাজনীতিতে আসার আগে ডা. লোটে শেরিং জেডিডব্লিউএনআরএইচ অ্যান্ড মঙ্গার রিজিওনাল রেফারেল হসপিটালে কনসালট্যান্ট সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেডিডব্লিউএনআরএইচে ইউরোলজিস্ট কনসালট্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০১৩ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০১৮ সালের শুরুতেই দলের শীর্ষপর্যায়ে চলে আসেন ডা. লোটে শেরিং।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, ময়মনসিংহ মেডেকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের ছাত্র ডা. লোটে শেরিং ভ’টানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, এটা আমাদের সকলের গর্ব, বাংলাদেশের গর্ব। তার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি।