উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
একটা সম্পর্ক যখন খাদের কিনারে এসে দাঁড়ায়, তখন ভাল করে ভেবে দেখা দরকার আপনি কতটা চেষ্টা করছেন। কিংবা চেষ্টাটা করতে আপনি ভিতর থেকে আদৌ সায় পাচ্ছেন কি না। পাশাপাশি উল্টো প্রান্ত থেকেও কতটা চেষ্টা দেখতে পাচ্ছেন সেটাও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
‘‘তুমি আমায় ফোন করছ না কেন?’’ ক্লান্ত স্বরে প্রেমিকার কাছে ফোনে জানতে চাইল জিৎ, ‘‘তুমি কী এমন ব্যস্ত যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১ মিনিট সময়ও বের করা যায় না! এটাকে তুমি আদৌ একটা সম্পর্ক বলবে?’’
‘‘আরে, আমি কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত। আমি তোমার জায়গাটা বুঝতে পারছি। বিশ্বাস করো আমি তোমাকেই ভালবাসি, কিন্তু আমি সত্যিই খুব ব্যস্ত।’’ সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির শেষে তার উত্তর কলকাতার বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বলল মৌ।
‘‘ধরে নিলাম তুমি সত্যিই আমাকে বোঝো, কিন্তু তা হলে তুমি আমাকে পাত্তা দাও না কেন? এর থেকে কি এটা বোঝা যায় না যে, তুমি চাও ব্যাপারটা শেষ করে ফেলতে। আমি সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে অনেক কিছু করেছি। হ্যাঁ, আমি কখনও ভুলও করেছি, কিন্তু আমি সৎ। আমি আমার ভুলগুলো মেনে নিয়েছি। কিন্তু যে তোমাকে ভালবাসে, তার সঙ্গে তুমি কি এটা ঠিক করছ?’’ কুঁদঘাটের বাড়িতে বসে কথাগুলো বলতে বলতে জিতের মনের মধ্যে পাক খাচ্ছিল তাদের তিন বছর লম্বা সম্পর্কের দিনগুলো।
‘‘তুমি কী করে এমন নিষ্ঠুর হয়ে গেলে! তোমার কি ফিলিংস বলে কি কিছুই নেই! বাস্তবতা ফিলিংসকে একেবারে দখল করে নিয়েছে?’’ আহত গলায় বলল জিৎ।
তার কণ্ঠস্বরে মিশে যাচ্ছিল অভিমানের রং, ‘‘তুমি যখন আমায় ফোন করো, মনে হয় যেন জাস্ট একটা দায়িত্ব পালন করছ। নিজের থেকে কখনও আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে ফোন করতে ইচ্ছে করে তোমার? যদি ইচ্ছে না করে, প্লিজ তা হলে ফোন কোরো না। দু’জনের সমান সদিচ্ছা না থাকলে, এ ভাবে খামোখা সম্পর্ককে বয়ে নিয়ে যাওয়ার মানেই হয় না। একে ভালবাসা বলে!’’
অবশেষে মৌয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সেও চেঁচিয়ে বলে ওঠে, ‘‘সম্পর্ককে বাঁচাতে তুমি কি এমন করেছ?’’
‘‘এ ভাবে কথা বোলো না। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি যাতে সবকিছু ঠিক থাকে। কিন্তু তোমার উচিত ছিল আমার পাশে থাকা, আমার সঙ্গে থাকা। কিন্তু বুঝতে পারছি না, তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য দিকে কেন চলে যাচ্ছ! এ ভাবে আমাদের সম্পর্ক কোনও ভাবেই টিকবে না। এত সহজেই একজনের এত কাছে এসেও আবার তার থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্য কারও কাছে চলে যাওয়া যায়! তুমি কি আদৌ সম্পর্কটার মধ্যে রয়েছ?’’
‘‘তুমি এটা কী বলছ! আমি অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছি জানলে কী করে?’’
‘‘তোমার ফেসবুক থেকে, তোমার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আর অবশ্যই আমার জন্য তোমার কমতে থাকা সময় থেকে।’’ চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিল জিৎ।
পরবর্তী কয়েক মিনিট কেউই কোনও কথা বলল না। কেবল নীরবতা যেন থিরথির করে কেঁপে যাচ্ছিল দুজনের মধ্যে। তার পর আচমকাই জিৎ সেই নৈঃশব্দকে ভেঙে চূর্ণ করে বলে উঠল, ‘‘দেখো, আমি তোমাকে আমার হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে ভালবেসেছি। আমি মানছি আমাদের মধ্যে বয়সের তফাত (জিৎ মৌয়ের থেকে ১০ বছরের বড়) রয়েছে। যার জন্য আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে একটা পার্থক্য গড়ে উঠেছে। আমি আমাদের সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তোমাকে আমি চিরকাল ভালবেসে যাব। তুমি প্লিজ আমার পাশে থাকো। ঝগড়া তো সব প্রেমেই হয়। তুমি আমার পাশে থাকলে সব ঠিক থাকবে।’’
জিতের আকুতিতে শেষ পর্যন্ত কাজ হয়েছিল। তাদের সম্পর্ক বেরিয়ে আসতে পেরেছিল জমতে থাকা কুয়াশার পর্দা ছিঁড়ে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমন হয় না। ‘কী কথা তাহার সাথে, তার সাথে’— এ কথা জীবনানন্দের কবিতা ছুঁয়ে আজও এক অমোঘ জিজ্ঞাসা যে কোনও প্রেমের সম্পর্কে। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সব সময় নিজের মতো করে তা ঠিক হয়ে যায় না। কাজেই, সমস্যা তৈরি হলে প্রথমেই ভেবে দেখতে হবে, সত্যিই সেটাকে ঠিক করে নিতে আপনি পুরোপুরি চেষ্টা করেছিলেন কি না। যদি নিশ্চিত হন তাকে আপনি যথেষ্ট সময় দিয়েছেন, ডেট বা ট্রিপে নিয়ে গিয়েছেন, পাশে থেকেছেন, তার সমস্যাগুলো বুঝতে চেষ্টা করেছেন, তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভেবে যদি দেখতে পান, আপনি বা আপনার সঙ্গী কেউই শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে চায়নি সম্পর্কটা টিকুক, তা হলে আপনাকে মেনে নিতেই হবে সম্পর্কটা শেষ হতে চলেছে কথাটা ঠিক নয়। সত্যিটা হল, সম্পর্কটা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে।
একটা সম্পর্ক যখন খাদের কিনারে এসে দাঁড়ায়, তখন ভাল করে ভেবে দেখা দরকার আপনি কতটা চেষ্টা করছেন। কিংবা চেষ্টাটা করতে আপনি ভিতর থেকে আদৌ সায় পাচ্ছেন কি না। পাশাপাশি উল্টো প্রান্ত থেকেও কতটা চেষ্টা দেখতে পাচ্ছেন সেটাও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
এবং ‘বিশ্বাস’। সিনেমা-সিরিয়াল-সাহিত্যে বহু ব্যবহৃত একটা শব্দ। একটা সম্পর্কের অন্যতম বুনিয়াদ এই বিশ্বাস-ই। একবার যা ভেঙে গেলে আবার জোড়া লাগানো শক্ত। ‘ভুলে যাও সব’ বলা সহজ। কিন্তু সত্যিই কি অত সহজে ভুলে যাওয়া যায়! যখন জানতে পারেন নিজেদের ভিতরের গোপন কথা অন্য মানুষও জেনে যাচ্ছে, তখন সেটা মেনে নেওয়া বড্ড কঠিন। বার বার নিজেকে প্রতারিত মনে হতে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক জার্নালে ১০০০ জন অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর উপরে চালানো একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই সমীক্ষা দেখা গেছে, সম্পর্কের পাথুরে অভিঘাত ছেলেদেরই বেশি আহত করে। আবার একটা চমৎকার ভাবে চলতে থাকা সম্পর্ক তাদেরই বেশি ফুরফুরে করে রাখে। সেক্ষেত্রেও তারাই বেশি লাভবান হয়। এই সমীক্ষা থেকে পরিষ্কার, ছেলেদের সম্পর্কে চালু ধারণাটা এবার ভেঙে খান খান হওয়া দরকার। প্রেম ভেঙে গেলে ছেলেদের কিছু আসে-যায় না, এ কথাটা আদতে ভিত্তিহীন।
মার্কিন মুলুকের ওয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সিমন এই সমীক্ষাকে পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন, ছেলেরা তাদের প্রেমিকা ছাড়া আর খুব বেশি মানুষের উপর মানসিকভাবে নির্ভরশীল থাকে না। অন্যদিকে, মেয়েরা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। কাজেই ব্রেক আপের পরে সামলে ওঠার সেটা একটা অবলম্বন হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি তিনি এও জানান, সম্পর্ক ভাঙার অবসাদ নরম আবেগের মানুষকে বেশি কষ্ট দেয়। যেন নিজের আত্মপরিচয়ের জায়গাটাই অতল ঘূর্ণির মধ্যে পাক খেতে থাকে।
পাঠকের মতামত