পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদানে ভেরিফিকেশন তথা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আবেদনকারীর বাসায় না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা আছে কিনা তা পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) থেকে পরখ করে দ্রুততম সময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিতে বলেছেন তিনি। সোমবার (১৮ এপ্রিল) ডিএমপি সদর দফতরে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এসব নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপি’র অর্ধশত থানার মধ্যে কোন কোন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিতে কতদিন সময় নিচ্ছেন সদর দফতর থেকে সেই বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার বিনিময়ে কোনও পুলিশ সদস্য অর্থ দাবি করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ পুরনো।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে আবেদন জানানোর পর তার নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর কাছ থেকে উৎকোচ দাবি করেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা। বিদেশ গমন এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরির জন্য কিংবা অন্যান্য কাজে অনেক সময় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয় বলে আবেদনকারীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে উৎকোচ দেন।
ডিএমপি’র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যদিও পাসপোর্ট ইস্যুর সময় নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে থাকে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পুলিশের অর্থ বা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পাসপোর্ট তৈরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলেন। এসব কারণে এই ভেরিফিকেশন বন্ধ করা যায় কিনা সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল ইসলাম মন্তব্য করেন, পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা নেই।
সেই সভায় বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ৩০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিনিময়ে দেড় লাখ টাকা দাবি করেছেন। ডিএমপি’র অপরাধ সভায় বিষয়টি তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সত্যিই যদি কোনও পুলিশ সদস্য এক্ষেত্রে অর্থ দাবি করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। আর যদি ঘটনার সত্যতা না থাকে তাহলে রাজেকুজ্জামান রতনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পুলিশের বিশেষ শাখায় ইমিগ্রেশনের পর ভেরিফিকেশন শাখাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কারণ, এই শাখার কর্মকর্তারা ভেরিফিকেশনের বিনিময়ে উৎকোচ গ্রহণের সুযোগ পান। ভুক্তভোগীরা জানান, উৎকোচ ছাড়া পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে এমন ব্যক্তি পাওয়া দুষ্কর।
সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের বিশেষ শাখায় পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব নিতে রীতিমতো তদবির করেন উপ-পরিদর্শন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। দিনে একাধিক পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করতে পারলে কয়েক হাজার টাকা আয় হয় বলে এসআই পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই শাখাকে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনসহ যেকোনও আইনি সহায়তার বিনিময়ে অর্থ দাবির বিষয়ে কোনও অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। তার দাবি, আগের চেয়ে বর্তমান অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে ভেরিফিকেশনের সময় অর্থ নেওয়ার যে কালিমা পুলিশের ওপর ছিল, সেটাই এখনও বহন করতে হচ্ছে।