সাইমুম সরওয়ার কমল, নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান কাজল, মারুফা জামান কলি ও মুফিজুর রহমান
সাইমুম সরওয়ার কমল, নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান কাজল, মারুফা জামান কলি ও মুফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজার-৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন আত্মীয়ে-আত্মীয়ে লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন, যাঁরা একে অপরের আত্মীয়। দলীয় মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে তাঁরা মাঠে নেমেছেন। আর তাতে ভোটের আগেই যেন স্থানীয় রাজনীতির মাঠ কিছুটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
আসনটি সদর, রামু ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে গঠিত। স্থানীয়দের মতে, আসনটি বরাবরই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল। আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন নিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে তিনি হ্যাটট্রিক করতে চান। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি।
এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সাংগঠনিক বিষয়েও একধরনের মিল পাওয়া যায়। ১৯৯১ সাল থেকে যাঁরা এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে দলের জেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের সম্পর্ক ভালো যায়নি। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে জেলার নেতাদের বিরোধ অনেকটা প্রকাশ্য। অন্যদিকে বিএনপি থেকে ২০০৮ সালে সর্বশেষ নির্বাচিত এমপি লুৎফুর রহমান কাজলের সঙ্গেও জেলা নেতাদের প্রকাশ্যে বিরোধ আছে। আবার এখানে দুই দলেই পারিবারিক রাজনীতির প্রভাব রয়েছে।
১৯৯১ সাল থেকে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ছাড়া) এ আসনে তিনবার আওয়ামী লীগ ও তিনবার বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হন মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে তাঁকে হারিয়ে এমপি হন বিএনপির খালেকুজ্জামান। ২০০১ সালে নির্বাচনী প্রচারের সময় খালেকুজ্জামান হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তাঁর ভাই প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মোস্তাক চৌধুরীকে হারিয়ে এমপি হন।
২০০৮ সালে দুই দলেই প্রার্থী বদল হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলকে হারিয়ে বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজল ক্ষমতায় আসেন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে বিএনপির কাজলকে হারিয়ে পরপর দুবার এমপি হন কমল।
এবার ক্ষমতাসীন দল থেকে কমল ছাড়াও মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপর কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের এমপি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, তাঁর স্বামী সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজলের নাম শোনা যাচ্ছে। কাজল ও কাবেরী বর্তমান এমপি কমলের ভাই-বোন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী নজিবুল ইসলাম বলেন, ‘দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ এ আসনে পরিবর্তন চায়। দুই মেয়াদে দলের এমপি থাকলেও মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পায়নি। এ জন্য মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটাতে প্রার্থী হতে চাই।’ আর নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করছি। দল থেকে মনোনয়ন চাইব। যোগ্যতা বিবেচনায় দল থেকে মনোনয়ন পাব বলে আশা করি।’
দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা-নেত্রী থাকলেও ছাড় দিতে নারাজ বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার। তিনি বলেন, তাঁর আমলে এলাকায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে মনোনয়ন চান।
অপর দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নেন। তবে এবার তাঁকে ছাড় দিতে নারাজ খালেকুজ্জামানের পরিবার। এই পরিবার থেকে তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। তাঁরা হলেন খালেকুজ্জামানের স্ত্রী মারুফা জামান কলি, ছেলে তানসির জামান উৎস এবং ছোট ভাই সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমানের নামও আলোচনায় আসছে।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। কিন্তু নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না।’
সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করব না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপির সঙ্গে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারবে না।’
এই দুই দলের বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মফিজুর রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সুত্র: আজকের পত্রিকা