বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মন্ডু বুথিডং টাউনশীপের গোদাম পাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি রোহিঙ্গা পাড়ায় আরকান আর্মিকে আশ্রয় দেয়াকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনারা সে সব গ্রামে বিমান হামলা চালাচ্ছে বুধবার ও বৃহস্পতিবার। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত মূহুর্মূহু যুদ্ধ বিমান থেকে গোলা বর্ষণে সে সব গ্রামের লোকজনের অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে ইতিমধ্যে পাহাড়ি পথ বেয়ে সীমান্তে জড়ো হয়েছে।
বিষয় টি নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত একাধিক রোহিঙ্গা এ প্রতিবেদককে বলেন, এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে তাদের স্বজনও রয়েছে। যারা দু'দিন ধরে পাহাড়ের নানা স্থানে অবস্থান করছে। এরা খাদ্য সংকটে পড়েছে বর্তমানে। এসব রোহিঙ্গারা নানা মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ খবরটি পৌঁছান বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের আত্মীয় স্বজনদের।রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবদুর রহমান, আবদুল মাজেদ ও হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন এ প্রতিবেদককে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ ও মেম্বার দিল মোহাম্মদ বলেন গত ২ মাসাধিককাল ধরে মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর সাথে কয়েকটি বিদ্রোহী বাহিনীর যুদ্ধ চলে আসছিলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো লাইনে বিদ্রোহী আরকান আর্মিকে দমনে তাদের আস্তানায় লক্ষ্য করে ভারী গোলা ছুঁটে আসছে মিয়ানমার সেনারা। যার কয়েকটি গোলা সীমান্তের জিরো লাইন পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তুমব্রু উত্তরপাড়া মসজিদের পাশে ও তুমব্রু কোনার পাড়ায় এসে পড়ে। এতে জিরো পয়েন্টের ১ রোহিঙ্গা যুবক মারা যায়, আহত হয় অপর ১ জন।
এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সীমান্তের নাইক্ষংছড়ি সদরের ঘুমধুমে ইউনিয়নের তুমব্রুর ৩৪ পিলার থেকে নাইক্ষংছড়ি সদর ইউনিয়নের ফুলতলীস্থ ৪৭ নম্বর পিলারের ৪২ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আর এ সীমান্তে কয়েক দফা স্থলমাইন বিষ্ফোরণের পর ৩৫ পিলার থেকে ৫৪ পিলারের ৬০ কিলো মিটার সীমান্ত জুড়ে স্থলমাইন বসানোর কারণে আরেক আতংক যুক্ত হয়। যাতে দূঃচিন্তায় পড়ে সীমান্তের শতশত বাংলাদেশী লোকজন।
একাধিক রোহিঙ্গা নেতা জানান, এরই মাঝে গত ২ দিন সীমান্তে মর্টারশেলের আওয়াজ শোনা না গেলেও মন্ডুর টাউনশীপের আশপাশের গ্রাম সমূহে বিমান হামলার পর রাখাইনের রোহিঙ্গারা প্রাণ ভয়ে সীমানার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গা নেতা আবদুল মাজেদ জানান, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু'দিন ধরে মিয়ানমার সরকার সীমান্তের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প থেকে দক্ষিণের কয়েকটি সীমান্ত চৌকিতে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমারেখার নাফনদীসহ জলসীমানায় মিয়ানমার নৌবাহিনীর অতিরিক্ত টহল ও নিরাপত্তা জোরদার করছে করার কারণে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীরা সর্তক অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে ঘুমধুমের তমব্রু বাজার ব্যবসায়ী শফিক আহমদ, আবদুল জব্বার ও আবদুল কাদের বলেন, ওপারে বিমান হামলা ও সেনা বৃদ্ধির খবরে এদেশে মানুষ আতংক গ্রস্থ হলেও এপারে বিজিবি টহল জোরদার করায় সীমান্তের লোকজন স্বাভাবিক জীবনে সময় পার করছে।
এসব বিষয় নিয়ে সোনাইছড়ি ও নাইক্ষংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যথাক্রমে এ্যনি মার্মা ও নুরুল আবছার ইমন অভিন্ন সূরে এ প্রতিবেদককে বলেন, তাদের স্ব-স্ব ইউনিয়ন এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষরা বিমান, গোলাগুলি ও স্থলমাইন বিষ্ফোরণের ভয়ে তটস্থ থাকলেও তারা পরিষদের মেম্বার, চৌকিদার দফাদার সহ সকলের মাধ্যমে সীমান্তে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিজিবির কঠোর অবস্থান বিষয়ে সচেতন করে রাখছেন।বৃহস্পতিবার ও সীমান্তের নাগরিকদের এ ধরণের ক্যাম্পইন করেছেন তারা।সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার