মক্কা মোকাররমায় পবিত্র কাবা নির্মাণের আগে নির্মাণ প্রস্তুতি শুরু হয় হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম-এর স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে সেখানে নির্বাসনের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে তাদের মক্কা মোকাররমার নির্জন মরুভূমিতে রেখে যাওয়ার সময় দোয়া করেন, ‘হে আমাদের রব! আমি আমার সন্তানদের একাংশকে শস্যক্ষেতহীন উপত্যকায় তোমার সম্মানিত ঘরের নিকট পুনর্বাসিত করলাম। হে আমার প্রতিপালক! তারা যাতে নামায কায়িম করে। কাজেই তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর যাতে তারা শুকরিয়া আদায় করে’। (সূরা ইবরাহীম : ৩৭)
হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সেই দোয়ার বরকতে যমযম কুপের প্রবাহ এবং পবিত্র কাবাকে ঘিরে গড়ে ওঠে জনবসতি যা আজ বিশাল পূণ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তার এই প্রিয় বন্ধুর ওপর পরীক্ষার পর পরীক্ষা চাপিয়ে তাকে যেমন খাঁটি করেছেন তেমনই তার ওরসে জন্ম নিয়েছেন শেষ নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পরবর্তী সকল নবী। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তা‘আলা নিজ ঘরের পাশেই ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্নের জন্য স্থান নির্ধারণ করে তাকে উম্মাতে মুহাম্মদীর জন্য মুসল্লারূপে নির্ধারণ করেছেন। এ সম্মান আর কাউকেই দেয়া হয়নি।
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সন্তান ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানীর নির্দেশ বাস্তবায়নে তার আন্তরিকতাকে মুসলমানদের জন্য চিরস্মরণীয় করে রাখতে সেই মিনাতেই কোরবানী করা হজ্জের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ধোকা থেকে বাঁচতে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম শয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন। সেই দৃশ্যটিও আল্লাহ তা‘আলার খুব পছন্দের বিষয় ছিল। হজ পালনকারীর জন্য এটিও করে দেয়া হয়েছে ওয়াজিব।
পবিত্র হজ পালনের জন্য সউদী আরবে অবস্থানরত বিশ্বের হজযাত্রীদের অধিকাংশই এখন মক্কা মোকাররমায় অবস্থান করছেন। তারা মিনা-আরাফাত-মুযদালিফায় অবস্থানে ৫ দিন অবস্থানের প্রস্তুতিতে প্রহর গুণছেন। তবে হজযাত্রীদের একাংশ আজ শেষ দিন কাটাবেন পবিত্র মদীনা মোনাওওয়ারায়। হজযাত্রীরা মদীনা মোনাওওয়ারায় ৮ দিন অবস্থান করে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামা‘আতসহ মসজিদে নববীতে আদায় করেন। এর মাঝে হজযাত্রীদের একদিন পবিত্র মদীনা মোনওওয়ারার দর্শনীয় এবং মহানবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ যেয়ারত করানো হয়। হজযাত্রীরা শোহাদায়ে উহুদ, মসজিদে যুল-কিবলাতাইন, সাবআ মাসাজিদ, মসজিদে কোবা এবং একটি খেজুর বাগানে ভ্রমণের সুযোগ পান। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নাত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কোবায় আগমন করে দুই রাক‘আত নামাজ আদায় করে তাকে একটি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে।’ (সুনান ইবনে মাজাহ, খণ্ড : ০১, হাদিস : ১৪১১)। মদীনায় অবস্থানরত হজযাত্রীরা গত শনিবার এর শেষ সুযোগ পেয়েছেন। আগামীকাল সকালেই তারা রওনা করবেন পবিত্র মক্কার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের যাত্রা নিরাপদ ও শান্তিদায়ক করে দিন। আমীন।