মঈনুল হাসান পলাশ ::
আওয়ামীলীগের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই দায়িত্বে আসবার অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলেন শুদ্ধি অভিযানের কথা। দলে হাইব্রিড ভর করেছে বলে বার বার সতর্ক করেছেন তিনি। আর এখন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পদটি পেয়ে তার কথিত হাইব্রিড উচ্ছেদে প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতা পেলেন তিনি।
বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী বিএনপি-জামায়াত বিহীন কার্যতঃ আনুষ্ঠানিকতার নির্বাচনের আগেই ১৫৩ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে যান আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা।
এদেরকেই পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের একটি বিশেষ শব্দের এমপি বলে দলের নেতাকর্মীরাই প্রচার করেছিলো।
যাই হোক, ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী তান্ডব। দেশে জাতিসংঘসহ ভিনদেশী কুটনীতিকদের সীমাহীন তৎপরতার কারণে চরম অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তায় দুলছিলো দেশ। নির্বাচন হবে? নাকি অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতা দখলে নেবে? এই নিয়ে ব্যাপক দোলাচলে দুলছিলো খোদ সরকারী দল আওয়ামীলীগও।
শোনা যায়, এমন দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে, যেখানে নির্বাচন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিলো, সেখানে দলের প্রার্থী নির্বাচন করাও জটিল হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের জন্যে।
নির্বাচনে শেষ মূহুর্তে বিএনপি-জামায়াত যোগ দিলে এক ধরণের প্রার্থী দিতে হবে। আর বিরোধীদল না এলে অন্য হিসাব।
শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতবিহীন সেই নির্বাচনে শেষ মূহুর্তে তাৎক্ষণিক বিবেচনায় প্রার্থী নির্ধারণ করে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামীলীগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু মাঠের ভোট ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি মনোনীত হতে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে প্রার্থীর জনপ্রিয়তার বিষয়টি চিন্তা করা ছিলো অবান্তর। কোনোভাবে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনটি শেষ করে নিজেদের ঘোষণা বাস্তবায়ন করেই বিজয়ীর ভাব নিতে চেয়েছিলো আওয়ামীলীগ।
১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রয়ারী ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসে ১২ দিনের সরকার গঠন করে বিএনপি। তারপর আর টিকতে পারে নি।
এই বিষয়টি ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনোত্তর আওয়ামীলীগ সরকারের চিন্তায়ও ছিলো। জাতিসংঘসহ পশ্চিমাদের প্রবল চাপের মুখে ওই সময় আওয়ামীলীগ অনেকটা প্রস্তত ছিলো অতি অল্প সময়ের মধ্যে আরেকটি ভালো নির্বাচন আয়োজন করার জন্যে। চাপ প্রবল হলে এবং দেশে বিএনপি-জামায়াত প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে বছর শেষেই অর্থাৎ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেয়া হবে।
কিন্তু পরিবর্তীতে আন্দোলন দুরের কথা অস্তিত্বের সংকটে পড়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত।
শোনা যায়, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের প্রাক্কালে যাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত করা হয়েছিলো, তাদের বড়জোড় বছর শেষে নির্বাচন পর্যন্ত রাখতে হবে। এমন চিন্তাই নাকি ছিলো আওয়ামীলীগৈর হাইকমান্ডে।
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সর্বোচ্চ সাফল্য হলো প্রচন্ড বিদেশী চাপ উপেক্ষা করে টিকে থাকতে পারা। আর বিএনপি-জামায়াতকে শক্তিহীন করে দেয়া। ফলে. প্রাথমিকভাবে যাদেরকে স্বল্প সময়ের জন্য এমপি হিসেবে রাখার চিন্তা ছিলো, তাদের নিয়ে পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ কাটানোর জন্য আওয়ামীলীগ প্রস্তত ছিলো কিনা প্রশ্ন রয়েছে।
সর্বশেষ,ভারতের প্রভাবশালী বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,“বেতারে বিদ্যুৎ সংযোগ হয় না, তার লাগে। তেমনি, মনের তারে বাঁধতে হয় মানুষকে, নইলে নির্বাচনে ভোট বাক্স ভরে না। সাফল্যের আলো জ্বলে না। নিজের আখের গুছোতে গেলে তার ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন। মানুষ বেজার বিরক্ত। তোয়াজেও কাজ হয় না। প্রার্থীর সব প্রতিশ্রুতি তখন ফাঁকা বুলি। কাছে গেলে তারা দূরে সরে। প্রাপ্তি কেবল প্রত্যাখানের যন্ত্রণা। সেই শঙ্কা আওয়ামি লিগের অনেক সাংসদেরই। সংখ্যাটা পঞ্চাশের কম নয়। এত দিন দলের চাক ভেঙে মধু খেয়েছেন। মৌচাকে মৌ সংগ্রহের দায়িত্ব নেননি। আওয়ামি লিগের ব্ল্যাক লিস্টে তাঁদের নাম। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াটা অনিশ্চিত।”
তার মানে কথিত “মধু খাওয়া” এমপিদের নিয়ে চরম বিরক্ত এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ।
এখন নেতাকর্মীদের দেয়া সেই বিশেষ শব্দের এমপিরা যদি ইতিমধ্যে মাঠে অবস্থান তৈরী না পারেন তো নিশ্চিত ওই কালিমা নিয়েই তাদের সাবেক হয়ে যেতে হবে।
লেখক-সম্পাদক ও প্রকাশক:দৈনিক সমুদ্রকন্ঠ।