রাজশাহীতে মধ্যরাতে এক নির্বাচন কর্মকর্তার বাসায় নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমনের প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। আসন্ন রাজশাহী সিটি নির্বাচন উপলক্ষে লিমন এক কাউন্সিলর প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করতে এসেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১৮ জুন) দিনগত রাত ১২টার দিকে পুলিশ ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে নির্বাচন কর্মকর্তার বাড়ি থেকে বের করে থানায় নেন।
এর আগে রোববার রাত ৯টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় রাজশাহীর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেনের বাসায় যান আওয়ামী লীগ নেতা মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন।
নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর লিমনের মামা আবদুল হামিদ সরকার টেকন নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় সিটি নির্বাচনে তিনি আবারও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন।
লিমনের বাবা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। লিমনের আরেক মামা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সম্প্রতি এক অশ্লীল ভিডিওকান্ডে সমালোচিত হন। মূলত পুরো পরিবারটিই এবারের সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন না বলে অভিযোগ দলের একাংশের।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা লিমন ওই নির্বাচন কর্মকর্তার বাসায় ঢুকার পরপরই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে অবরুদ্ধ করেন। অবরুদ্ধকারীদের দাবি, লিমনের সঙ্গে আরও দুজন ওই বাসায় প্রবেশ করেন। লিমনকে বাসায় অবরুদ্ধ করার সময় একটি ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেলে করে তারা পালিয়ে যান। নির্বাচন কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করতেই তারা মধ্যরাতে এসেছিলেন বলেও দাবি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।
এদিকে লিমনকে অবরুদ্ধ রাখার সময় উপস্থিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। মামা কাউন্সিলর প্রার্থী টেকনকে জেতানো এবং আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে পরাজিত করার জন্য টাকা দিতে এসেছিলেন এমন অভিযোগ তুলে লিমনকে দল থেকে বহিষ্কারেরও দাবি তোলা হয়।
এ বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহরাওর্দী হোসেন বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেনের বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমনকে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কেন তিনি ওই নির্বাচন কর্মকর্তার বাড়িতে গিয়েছিলেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানা যাবে।
তবে নির্বাচন কর্মকর্তার বাসা থেকে কী উদ্ধার করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশ নির্বাচন কর্মকর্তার বাসার সামনে অবস্থান করছে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেনও তার ওই ভাড়া বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনকে মোবাইলে একাধিক বার কল দিলেও রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
উল্লেখ্য, আগামী ২১ জুন ইভিএম পদ্ধতিতে রাসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। নগরীর মোট ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১৫৩টি কক্ষে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন। আর নারী ভোটার এক লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ভোটার ৬ জন। এবার নতুন ভোটার রয়েছেন ৩০ হাজার ১৫৭ জন।