সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার :;
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ মে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষদিন। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। কক্সবাজার শহরজুড়ে এখন আলোচনার বিষয় পৌর নির্বাচন।
এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান এবং নাগরিক কমিটির প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদও ঈদ শুভেচ্ছার আড়ালে গণসংযোগ শুরু করেছেন।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল। বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই পৌরসভার নির্বাচনের ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।
তথ্য মতে, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। কিন্তু গেলো পাঁচ বছরে ঘরে-বাইরে শক্ত প্রতিপক্ষ তৈরি করেন মেয়র মুজিব। এছাড়া বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রের শিরোনাম হন তিনি। বিতর্ক এড়াতে এবার তাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তার পরিবর্তে মনোনয়ন দেওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে। তাকে মনোনয়ন দিলেও দলের নেতাকর্মীদের মাঝে তেমন একটা আমেজ দেখা যায়নি। উল্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে সাতকানিয়ার বাসিন্দা বলে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়। এছাড়া তার বড় ভাই মুজিবুর রহমান এখনো জামায়াতের সক্রিয় সমর্থক। ছোট ভাই কক্সবাজার পৌর যুবদলের আহ্বায়ক। যে কারণে দলের অভ্যন্তরে তাকে নিয়ে বিভাজন তৈরি হয়েছে।
এদিকে, দলের মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এ কে এম মোজাম্মেল হকের বড় ছেলে মাশেদুল হক রাশেদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নানা পদে দায়িত্বপালন করেন। তার ছোট ভাই শহিদুল হক সোহেল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, আরেক ভাই শাহীনুল হক মার্শাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সবার ছোট ভাই কায়সারুল হক জুয়েল কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। একমাত্র বোন তাহমিনা চৌধুরী লুনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি। কক্সবাজার পৌরসভায় তাদের প্রভাব রয়েছে। মাসেদুল হক রাশেদ নাগরিক কমিটির প্রার্থী হওয়ায় দলীয় প্রতীকের প্রার্থী আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
সবশেষ শনিবার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল। যদিও তিনি কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের ব্যানারে প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছেন তারপরও তার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের একাংশের সমর্থন আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। দুপুরে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থিতা ঘোষণা করে তিনি বলেন, কোনো অপশক্তি আমাকে নির্বাচন থেকে সরাতে পারবে না। এসময় তিনি তার দায়িত্বকালে পৌরসভার কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশনসহ নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন।
চলতি মেয়র মুজিবুর রহমানের সময়ে বাস্তবায়িত সড়ক উন্নয়নসহ নানা প্রকল্প তার সময়ে নেওয়া দাবি করে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সুযোগ পেলে কক্সবাজারকে তিনি স্মার্ট পর্যটন নগরী করার চেষ্টা করবেন বলেও অঙ্গীকার করেন।
এদিকে, কক্সবাজারের পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই অন্যভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থিরা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করে নিজেদের জন্য দোয়া চাচ্ছেন।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, সরওয়ার, রাশেদ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমানের মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন নাগরিক ফোরাম সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সরওয়ার কামাল, এমনটিই দাবি তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা দাবি করেন, প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে। বর্তমান মেয়র মুজিবুর রহমান বা মাসেদুল হক রাশেদকে মনোনয়ন দিলে সহজেই বিজয় নিশ্চিত করা যেত। এখন মাহবুবুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় নৌকার বিজয় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, আমার মরহুম বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মোজাম্মেলক হক ছিলেন কক্সবাজারের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। কক্সবাজার পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে তিনি সবসময় পাশে ছিলেন। তিনি মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আমিও বাবার মতো সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, দল আমাকে যোগ্য বিবেচনায় মনোনয়ন দিয়েছে। আমি দলের সব নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিতে কাজ করবো। বর্তমান সরকার যে পরিমাণ উন্নয়ন কাজ করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ শেখ হাসিনার প্রার্থীকে হারতে দেবে না।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদত হোসেন বলেন, কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ মে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ, ১৮ মে যাচাই বাছাই, ২৫ মে প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ১২ জুন ভোটগ্রহণ হবে। আমরা অতীতের মতো দলীয় প্রভাবমুক্ত এবং প্রশাসনের পক্ষপাতহীন নির্বাচন উপহার দেবো। জাগো নিউজ