মরক্কোতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, এ দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ১২ জনে পৌঁছেছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত এগারোটার কিছু পরে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮। এতে নিহত অধিকাংশ লোকজন দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা, যেখানে পৌঁছানো খুব কঠিন।
এদিকে মরক্কোর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান লাহসেন মান্নি জানিয়েছেন, শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর আরও বেশ কয়েকবার মৃদু কম্পন (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ৫ মাত্রার। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, এই ভূমিকম্প থেকে সুনামি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টার কিছু পরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আটলাস পর্বতমালার ওকাইমেডেনের স্কি রিসোর্টের কাছে, যা জনপ্রিয় পর্যটন শহর মারাকেশ থেকে ৭৫ কিলোমিটার (৪৫ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত।
মারাকেশের চিকিৎসক ডা. হেশাম খারমৌদি বলেন, শহরে আহতের সংখ্যা বাড়ছেই। তিনি বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবকরা লোকজনকে সহায়তা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, চিকিৎসাকর্মী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু আমাদের এখন একমাত্র সমস্যা হলো, রক্তের ব্যাগের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা মানুষকে রক্তদানের আহ্বান জানাচ্ছি। সাধারণ মানুষ আমাদের আহ্বানে ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে মারাকেশ আঞ্চলিক রক্ত সঞ্চালনকেন্দ্র। সেখানকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, অসংখ্য পুরোনো ভবন ধসে পড়েছে।
মারাকেশের স্থানীয় বাসিন্দা আবদেলহাক এল আমরানি (৩৩) বলেন, আমরা প্রচণ্ড কম্পন অনুভব করি। এরপরেই বুঝতে পারি যে, ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। তিনি বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছিলাম যে, ভবনগুলো কাঁপছে। এরপরেই আমি বাইরে বেরিয়ে যাই এবং দেখি যে অনেকেই সেখানে আছে। লোকজন ভয়ে-আতঙ্কে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। শিশুরা ভয়ে কাঁদছিল।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১০ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না এবং টেলিফোনের নেটওয়ার্কও ছিল না। পরে অবশ্য সব আবার স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সবাই বাইরেই থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার।