চিরন্ত সত্যের নাম মৃত্যু। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে ভোগ করতে হবে। আলিঙ্গন করতে হবে সত্যের সাথে। আজ যেমন না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন এটিএম শামসুজ্জামান। মৃত্যুর আগে বলে গেছেন তার লাশ যেন এফডিসিতে না নেওয়া হয়, কিন্তু কেন?
এফডিসি তাকে দিয়েছেন যশ খ্যাতি- করেছেন বরেণ্য। সেই এফডিসি পাড়াতেই লাশ নিতে মানা করেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। মৃত্যুর আগে তিনি বলে গেছেন, তার যেন একাধিক জানাজা না হয়। একটি যেন জানাজার নামাজ পড়ানো হয়।
আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি জানান তার জামাতা ইমতিয়াজ আহমেদ রাশেদ।
তিনি বলেন, ‘বাবা মৃত্যুর আগে বলেছেন, শুধু একটি জানাজা পড়াতে। তিনি নারিন্দার পীর সাহেবের মুরিদ ছিলেন। তাই তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নারিন্দার পীর সাহেব তার গোসলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
বাবা বলেছেন- তার মৃত্যুর পর গোসল, জানাজা ও দাফন নারিন্দার পীর সাহেবের হাতে যেন হয়। তার শেষ ইচ্ছে হিসেবে ছিলো, সূত্রাপুরে জানাজা ও দাফন করা হবে জুরাইন কবরস্থানে।’
এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ভাই রতন জামান বলেন, ‘মৃত্যুর পর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শহীদ মিনারে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেওয়া হয় এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভাই এসব ব্যবস্থা না করার জন্য বলে গেছেন। তার মরদেহ শহীদ মিনার বা এফডিসিতে নিতে নিষেধ করেছেন।’
রতন জামান উল্লেখ করেন, ‘‘যেহেতু তিনি নারিন্দার পীর সাহেবের মুরিদ ছিলেন। মৃত্যুর পর তার নির্দেশ মেনে সবকিছু করার জন্য আদেশ দিয়ে গিয়েছেন আমার ভাই। তিনি যে ঘরে থাকতেন, সে ঘরে ছিলো তার বিভিন্ন পদক, সনদ, সম্মাননা ক্রেস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। ভাইয়ের মৃত্যুর এক মাস আগে তিনি বলেন, ‘এসব জিনিসপত্র বস্তাবন্দী করে ফেলো। আমি যেখানে থাকবো না, সেখানে এসব রেখে লাভ কি!’ তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা তার একটি ছবি রাখা হয়। হয়তো, ভাই বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি শিগগিরই আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন।’’
এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন। তিনি প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ‘জলছবি’ সিনেমার জন্য। অভিনেতা হিসেবে এটিএম শামসুজ্জামানের অভিষেক ১৯৬৫ সালে। এরপর ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে তিনি আলোচনা আসেন। ২০০৯ সালে ‘এবাদত’ নামের প্রথম সিনেমা পরিচালনা করেন এটিএম শামসুজ্জামান।
১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এরপর ২০১২ সালে রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এটিএম শামসুজ্জামান। ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই অভিনেতা। এছাড়া, শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ডিবিসি নিউজ
পাঠকের মতামত