ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি কখনো মৃত্যুকে ভয় পাইনি না। এক আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করিনি। কারণ সবসময় মনে রেখেছি আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি তো জানি জন্মালে মরতে হবে। তাই মরার আগে মরতে চাই না।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা স্মরণে রবিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
এর আগে ২১ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট হামলায় কোনো আলামত সংগ্রহ করেনি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার। এ ঘটনায় বিশ্বের বিবেক নড়ে গেলেও বিএনপির নেত্রী একটি কথাও বলেননি। তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনা আমরা ঘটিয়েছি। কিন্তু আমি প্রশ্ন করি আমরা কি সুইসাইড করতে সেখানে এসেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনার পর গ্রামের কোথাকার এক জজ মিয়া নামে নাটক সাজানো হলো। এ নিয়ে পার্লামেন্ট কথা বলতে দেয়নি তখনকার সরকার। আনতে দেয়নি কোনো নিন্দা প্রস্তাব। তাদের প্রতিটি বক্তব্যে আভাস ছিল তারা আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনায় আমরা ২২ জনকে হারিয়েছি। আহত হয়েছেন আমাদের ১০০০ জন। এ ঘটনার পরে টের পেলাম কতগুলো হাসপাতাল আছে ঢাকায়। সব হাসপাতালে আমাদের আহত নেতাকর্মী। আমি সবার খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু বিএনপির মনোভাবাপন্ন কোনো ডাক্তার সেদিন আহতদের পাশে ছিল না। আমাদের মনোভাবাপন্ন চিকিৎসকরা এগিয়ে এসেছিলেন। সেদিন তো পিজি হাসপাতালে ঢুকতে দেয়নি।
তত্ববধায়ক সরকারের সময়ের কথা উত্থাপন করে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় যারা আগে ক্ষমতায় ছিল তাদের না ধরে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। আমাকে খালেদার আগে গ্রেপ্তার করে। আমাদের নেতাকর্মীরা সোচ্চার হওয়ায় ও আন্দোলন গড়ে তোলায় আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।
তিনি বলেন, কিছু দেশবিরোধী শক্তি জঙ্গিদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এর মোকাবিলা করছি। দুনিয়ার কেউ এ সন্ত্রাসীদের আক্রমণের বাইরে নয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এ সন্ত্রাস ঘটছে। বাংলাদেশের মানুষ এ জঙ্গিদের একতাবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করেছে।
২১ আগস্টের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম তিনটা গ্রেনেড মারার পর, একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করেছে। জানি না আমার কী ভাগ্য, গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরেই পড়ার কথা। কিন্তু সেখানে না পড়ে, ডালায় লেগে পাশে পড়ে যায়। আমাদের সাবেক মেয়র হানিফসহ ওখানে যারা নেতা-কর্মী ছিল, তারা আমাকে ঘিরে ধরে। আমি টের পাচ্ছি সব স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায় এসে লাগছে। আমার গায়ে গরম রক্ত বেয়ে পড়ছে। একটার পর একটা গ্রেনেড মেরেছে। ১৩টি গ্রেনেড তারা ছুড়েছিল। তার মধ্যে প্রায় মধ্যে ১১ থেকে ১২টি ফুটেছিল। ওই অবস্থা যখন চলে, মনে হচ্ছিল কেয়ামত এসে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সন্ত্রাস করে, গ্রেনেড হামলা করে, তাদের স্থান যেন বাংলার মাটিতে না হয়। এ বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কারণ, তারা কখনো বাংলাদেশের মানুষকে কল্যাণ দিতে পারে না, অমঙ্গল ছাড়া। তারা তো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, সেখানেই তারা বারবার আঘাত আনে। ২১ আগস্টের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে সেটাই আমরা চাই।