মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক পবিত্র কাবা। কাবা ঘরকে ঘিরে অবস্থিত মসজিদে হারাম। প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের হৃদয়ের বাসনা থাকে স্বচক্ষে পবিত্র কাবা দেখার, মসজিদে হারামে নামাজ আদায় করার। সেই কাবা চত্বরে, কাবাকে সামনে রেখে ইমামতির দায়িত্বে একে একে কাটালেন ৩৭ বছর। বলছি, হারামাইন প্রেসিডেন্সির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস সুদাইসের কথা।
৩৭ বছর আগে ১৪০৪ হিজরির ২২ শাবান মসজিদে হারামে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। বাদশাহ খালেদ বিন আবদুল আজিজ (রহ.) রাজকীয় আদেশে নিয়োগ দেন ২২ বছর বয়সী সুদর্শন ও সুকণ্ঠী আলেম আবদুর রহমান আস সুদাইসকে। আসরের নামাজের ইমামতির মধ্য দিয়ে তিনি কাবা প্রাঙ্গণে ইমামতির দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনিই আজকের বিশ্বখ্যাত কারি শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস।
শুধু ইমাম-খতিব নয়, এখন তিনি মক্কা-মদিনার পরিচালনা কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট। এ পদে তিনি নিয়োগ পান ১৪৩২ হিজরি সালে। তখন তার বয়স ৫১। চলতি বছর এ পদে তাকে পুনঃনিয়োগ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বাদশাহ সালমানের সঙ্গে পবিত্র কাবার ভেতরে নামাজ আদায় করছেন শায়খ সুদাইস, ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর আনাচে-কানাচের মুসলমান শায়খ সুদাইসকে চেনেন তার সমধুর কণ্ঠের কোরআন তেলাওয়াতের জন্য। শায়খ সুদাইস একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক ও বিদগ্ধ লেখক। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৯টি। তিনি ১৯৯৫ সালে মক্কার উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ফ্যাকাল্টি থেকে পিএইচডি (ডক্টরেট) ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
সদা বিনয়ী এই মানুষটি সব সময় সাধারণ মানুষদের কাছে থাকতে ভালোবাসেন। প্রভূত সম্মান ও মর্যাদা তাকে আরও বিনয়ী বানিয়েছে। তাইতো দেখা যায়, কাবার প্রধান ইমাম হয়েও তিনি ক্লিনারদের সঙ্গে বসে ইফতার করতে ও খাবার খেতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। অসুস্থ হাজিদের হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাওয়াফ করান, পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নেন।
১৯৬০ সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জন্মগ্রহণকারী শায়খ সুদাইস মাত্র ১২ বছর বয়সে কোরআনে কারিমের হাফেজ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল শায়খ সুদাইস নামাজে দাড়ালেই কেঁদে ফেলেন। তার কোরআন তেলাওয়াত শুনে মনে হয়, মাত্র কোরআন নাজিল হচ্ছে। দরাজ কণ্ঠে হৃদয়গ্রাহী কোরআন তেলাওয়াতের কারণে সারাবিশ্বে ব্যাপক সুনাম রয়েছে তার।
তার প্রেসিডেন্সির মেয়াদকালে মসজিদে হারামের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়। যুগোপযোগী নানা প্রকল্প বাস্তবায়নে তার প্রশংসার জুড়ি নেই। মসজিদে হারামের শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে নানা কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজনে ভিন্নতা ও বৈচিত্রতা চোখে পড়ার মতো। হারামের পাঠদান কর্মসূচীকে বেগবান রাখতে যোগ্য ও প্রাজ্ঞ আলেমদের নিয়োগ দেন। হাজিদের শতভাগ সেবা নিশ্চিতে নানা ভাষায় অভিজ্ঞ লোকদের নিয়োগ নিশ্চিত করা হয় তার প্রচেষ্টায়।
২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো হজের খুতবা প্রদান করেন শায়খ আবদুর রহমান সুদাইস।
মুসলিম জাতির ঐক্যের প্রতীক শায়খ সুদাইস কথিত ইসলামফোবিয়া ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে ইসলাম বিরোধীদের কাছে ‘বোমা হামলা এবং সন্ত্রাসবাদ’ বিষয়ে ভুল ধারণার অপনোদন করতে সক্ষম হয়েছেন। চলমান করোনা মহামারির মাঝেও মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর কার্যক্রম চালু রাখতে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি করোনা রোগীদের জমজমের পানি সরবরাহের আদেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৪০৪ হিজরির ২২ শাবান (১৯৮৪) শায়খ সুদাইসের সঙ্গে একই দিনে শায়েখ সালেহ আল হুমাইদকে মসজিদে হারামের ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনিও সুনামের সঙ্গে ৩৭ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।