মাথা লম্বা– আকৃতিতে দেহ থেকে ভিন্ন। শরীরের উপরিভাগের অর্ধেক কালো, গাঢ় নীলাভ ও বাদামি রঙের। নিম্নাংশ হলুদাভ তীব্র চিত্রিত। পুরোটা দেখে মনে হতেই পারে রঙিলা কোনো বিশেষ বস্তু। আদতে এটি বিষাক্ত ‘ইয়েলো বেলিড’ সাপ। যাদের বাস প্রশান্ত মহাসগরের পানির ওপরের স্তরে। সচারচর উপকূলে দেখা মেলে না। সম্প্রতি সেই বিরল দৃশ্য দেখা গেছে কক্সবাজার। এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত তিনটি ইয়েলো বেলিড সাপ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে এসেছে। এর মধ্যে সবশেষ বুধবার (৫ জুন) বিকালে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা যায় একটি।
কক্সবার সৈকতের লাইফগার্ড জয়নাল আবেদীন বলেন, গত এক সপ্তাহে সৈকতে ভেসে আসে তিনটি অসুস্থ সামুদ্রিক সাপ। প্রত্যেকটা ইয়েলো বেলিড। বুধবার লাবনী পয়েন্টে ভেসে আসা সাপটি সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। এর আগে সোমবার একটি সাপ পর্যটকরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে এই সাপের দেখা মেলে। সাপটি বিষাক্ত হওয়ায় এ ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যটকদের বিভিন্ন সতর্কতা দেওয়া হয়। বিচ কর্মীরা মাইকিং করে, হোটেল ও সৈকতের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেহেতু সৈকতে বর্ষা মৌসুমে সামুদ্রিক সাপের দেখা মিলছে তাই এ ব্যাপারে নির্দেশনার পাশাপাশি মাইকিং করা হবে। পর্যটকদের আরও সতর্ক করা হবে।
ছোবলের প্রভাব
সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, ইয়েলো বেলিড সাপের বিষদাঁত বা ফ্যাংগুলি বেশ ছোট– ১ দশমিক ৫ মিলিমিটার। খুব সামান্য পরিমাণে বিষ ঢালতে পারে। তবে সামুদ্রিক সাপের এরাই বেশি ভয়ঙ্কর। এদের শক্তিশালী নিউরোটক্সিন এবং মায়োটক্সিন রয়েছে। এনভেনোমেশন বা বিষক্রিয়ার লক্ষণে রয়েছে পেশিব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া, তন্দ্রা এবং বমি হওয়া ইত্যাদি। গুরুতর কামড়ে সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে এই সাপটির কামড়ে প্রাণহানির ঘটনা বিশ্বব্যপী খুবই বিরল।
তিনি জানান, ইয়েলো বেলিড মূলত হাইড্রোফিনি সাবফ্যামিলির একটি বিষধর সাপ। দেহের উপরিভাগ কালো থেকে গাঢ় নীলাভ-বাদামি রঙের। নিম্নাংশ হলুদাভ থেকে তীব্রভাবে চিত্রিত। লেজ প্যাডেল আকৃতির এবং গাঢ় দাগ বা হলুদ। দেহের হলুদ রংয়ের জন্যই একে ইয়েলো বেলিড নামে ডাকা হয়। দৈহিক আঁশ ছোট, মসৃণ এবং ষড়ভুজ আকারের; মাথার আঁশ বড় এবং নিয়মিত। বড় চোখের একটি নীলচে-কালো আইরিস আছে। উপকূল এবং প্রবাল প্রাচীর থেকে দূরে খোলা সমুদ্র এদের আবাসস্থল, ফলে উপকূলের লোকজন সচারাচর এদের দেখতে পান না বলে অনেকেই সাপটিকে বিরল প্রজাতির মনে করেন।
জন্মদিন থেকে শিকারি
সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, সাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশে ইয়েলো বেলিডের প্রধান খাদ্য মাছ। সাগরের উপরের স্তরে চুপচাপ শিকারের অপেক্ষা থাকে। নিচ থেকে কোনো মাছ কাছাকাছি এলেই এরা আক্রমণ করে। সাঁতার কাটে দেহের পার্শ্বীয় ভারসাম্য দিয়ে। সামনে ও পেছনে– উভয় দিকে যেতে পারে। ডাইভিং, পালানো এবং খাওয়ানোর সময় প্রতি সেকেন্ডে এক মিটার পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারে। দ্রুত সাঁতার কাটার সময় তারা কখনও কখনও মাথা পানি থেকে বের করে দেয়। স্থলভাগে সোজা থাকতে পারে না। কার্যকরভাবে চলতে পারে না। সারা বছরই প্রজনন করতে পারে। স্ত্রী ইয়েলো বেলিড একসঙ্গে দুই থেকে ছয়টি বাচ্চার জন্ম দেয়; যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ মিলিমিটার। এরা যথেষ্ট চর্বিযুক্ত দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের প্রথম দিন থেকেই শিকার করতে পারে।