এ.এম হোবাইব সজীব::
মানব পাচার ইয়াবা ব্যবসা কোম মতে থামছেনা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার উপকূলীয় নৌ-চ্যানেল মাতারবাড়ী উপকূল দিয়ে। উপজেলার মাতারবাড়ী চ্যানেলের বঙ্গোপসাগর উপকূল দিয়ে মানবপাচার-বড় বড় ইয়াবার চালান গন্তব্য পৌঁছে দিচ্ছেন শীর্ষ মানবপাচারকারী ও ইয়াবার গডফাদার মাতারবাড়ীর স্থায়ি বাসিন্দা কথিত রশিদ আহমদ (বহদ্দার) নামে লোকটি। কয়েক বছর আগেও যারা সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের জীবন যাপনে হঠাৎ এসেছে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। অল্প সময়ে অনেকে হয়েছেন কোটি-কোটি টাকার মালিক। মাছ ধরা পেশার আড়ালে অধিকাংশ জেলে জড়িয়ে পড়েছেন মানবপাচার ও ইয়াবা ব্যবসায়। তৈরী করছেন একাধিক মাছ ধরার ট্রলার। তার মধ্যে রশিদ আহমদ অন্যতম ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত সময় ব্যাপক হারে মালয়েশিয়াগামী লোকজনদের নিয়ে কাড়াকাড়ির প্রতিযোগিতা, সংঘর্ষ ও অপহরণসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে মহেশখালী উপকূলীয় এলাকা এখনও আতংকের জনপদের পরিণত হয়েছে। এখন আগের তুলনায় অনেকংশ মালয়েশিয়াগামী মানবপাচার কমে আসলেও ইয়াবা ব্যবসা রয়ে গেছে টিক জায়গায়।
জানা গেছে, দালাল সিন্ডিকেটের ও কালো টাকার ছড়াছড়িতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনদের ভূমিকাও প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছে। উপজেলার মাতারবাড়ী সিকদার পাড়ার গ্রামের রবি চান্দ এর ছেলে রশিদ আহমদ (৪৫) নিজেকে বহদ্দার পরিচয় দিয়ে ফিংশিং ট্রলার দিয়ে মাছ ব্যবসায়ার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে মানবপাচার ও টেকনাফের শীর্ষ ব্যসায়ীদের সাথে ইয়াবার ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়লে প্রশাসনের নজরে আসেনি তিনি কোন সময়। অভিযুক্ত রশিদ আহমদ নিজস্ব ফিশিং বোট দিয়ে মাছ ব্যবসার আড়ালে র্দীঘ দিন যাবত মানবপাচার ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে গেলেও কোন সময় প্রশাসন স্থানিয় লোকজন আচঁ করতে পারেনি তাকে। নামে তিনি মাছ ব্যবসা করতে বলে এলাকায় পরিচিত হলেও তার মূল টাগের্ট ছিল মানবাপাচার ও ইয়াবা ব্যবসা। সম্প্রতি জানাজানি হওয়ার সম্ভাবনা দেখে এই ইয়াবা গডফাদার রশিদ আহমদ তার মালিকানাধিন মাছ আহরণ করার ট্রলার বিক্রি করে দিয়েছে বলেও জানা গেছে। মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের শীর্ষ স্থানিয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করা সত্বে জানান, রশিদ আহমদ এমনিতে এলাকায় চিটিং বাটপার হিসাবে পরিচিত। তার চলাফেরায় মধ্যেয় মানবপাচার ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত বলে মনে হই।
সম্প্রতি মানব পাচার প্রতিরোধের পাশা-পাশি দালালদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের নির্দেশে রয়েছে। স্বল্প খরচে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে রশিদ এক শ্রেণীর দালার চক্র সাথে আতাঁত করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোক এনে গভীর রাতে মেশিন চালিত বোটে তুলে দিচ্ছে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। যাত্রা পথে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও মাঝে মধ্যে ধরা পড়ছে কিছু যুবক। স্থানিয়রা জানান, কিন্তু প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে সমুন্দ্র পথে মালয়েশিয়ায় গমন ঠেকানো যাচ্ছেনা জেলার উপকুলীয় অঞ্চলের মাতারবাড়ী উপকূলীয় পয়েন্টে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব দালালের সাথে পুলিশের অসাধু কিছু কর্মকর্তার অথপূর্ণ যোগসাজস থাকায় বলতে গেলে বেপরোয়াভাবে মানব পাচার অব্যাহত রয়েছে মাতারবাড়ী পয়েন্টে। মালয়েশিয়া মানবপাচারের জন্য সংঘবদ্ধ দালালচক্র মাতারবাড়ী নৌ-চ্যানেল ব্যবহার করছে। বিগত সময়ে পাশ্ববর্তী বদরখালী-পেকুয়া ঘাটে আটক মালয়েশিয়াগামী যাত্রী, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্বল্প খরচে স্বপ্নের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে এক শ্রেণীর দালালচক্র দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ গামীদের জড়ো করে এ পয়েন্ট দিয়ে ইঞ্জিন চালিত বোটে তুলে দিচ্ছে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। এতে প্রতিনিয়ত দরিদ্র পরিবারের শত যুবক প্রতারিত হওয়ার পাশা-পাশি আর্থিকভাবে ফতুর হয়ে যাচ্ছে। অনেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার আগেই থাই নৌ-বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জেলের ঘানি টানছে। আবার থাইল্যান্ড সীমান্তের গহীণ অরণ্যে মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট চক্রের কেউ কেউ অবস্থান করে আগত বাংলাদেশী যুবকদের ধরে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবেও ব্যবহার করছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়াগামী অসংখ্যা বাংলাদেশীকে থাইল্যান্ডের গহীণ অরণ্যে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহার করার ও মেরে ফেলের খবর বেরিয়েছে বিশ্ব মিড়িয়ায়। এরপরেও অভিভাবকেরা সচেতন না হওয়ায় দিন দিন বেপরোয়াভাবে চলছে সমান তালে মানব পাচার। পুলিশ জানান বিগত সময় মানব পাচারকালে মহেশখালী-বদরখালী নৌ-চ্যানেলে শতাধিক যাত্রী আটক হয়েছে।
অপরদিকে টেকনাফ সীমান্তের থেকে ইয়াবা এনে কথিত রশিদ আহমদ ইয়াবা ব্যবসায়া চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। আর টেকনাফ সীমান্তের জল ও স্থল পথ দিয়ে আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। টেকনাফের কিছু ব্যক্তির ক্ষমতার দাপট ও প্রভাবে ইয়াবা পাচার হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। খোদ আইনশৃংখলা বাহিনীও প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে অসহায় বলে জানা গেছে। সরেজমিন জানা গেছে ইয়াবা পাচারের লোমহর্ষক তথ্য। দীর্ঘদিন ধরে সাগর পথে বড় বড় মাছ ধরার ট্রলারে করে টেকনাফ থেকে ইয়াবার বিশাল বিশাল চালান যাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালী-মাতারবাড়ী-কুতুবদিয়া নৌ চ্যানেল দিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও নারায়নগঞ্জে খালাস করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মাঝ পথে বড় বড় চালান আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে। র্যাব, কোষ্টগার্ডে হাতে ইয়াবা নিয়ে মহেশখালীর একাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেও মহেশখালী থানা পুলিশের কাছে ইয়াবা ব্যবসায়িদের তেমন কোন তথ্য নেই।
টেকনাফের ইয়াবার বড় বড় রাঘব বোয়ালরা এখন নিজ এলাকা ত্যাগ করে বেশির ভাগ চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে রয়েছে, সাইফুল করিম প্রকাশ হাজী সাইফুল, শুক্কুর, শফিক, ফয়সাল, নিপু, বড় হাবিব পাড়ার জাফর আলম, নাজির পাড়ার সিদ্দিক আহমদ, ফজল হাজির ছেলে জিয়া, একরামসহ আরো অনেকে। তারা চট্টগ্রামে অবস্থান করে মিয়ানমার থেকে আনছে ইয়াবার বড় বড় চালান। তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে টেকনাফের খুরেরমুখ পয়েন্টের ফয়সাল ও তার চাচা, আক্তার কামাল, শাহেদ কামাল ও মাতারবাড়ী কথিত রশিদ আহমদ প্রকাশ বহদ্দার।
মাতারবাড়ী পুলিশ বিটের আইসি এস,আই আবদুল মালেকের সাথে এব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এব্যাপারে তার কাছে কোন তথ্য নেই তবে প্রতিবেদকের কাছে নাম ঠিকনা নিয়ে যাচাই করে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে মহেশখালী থানার ওসি বাবুল চন্দ্র বণিক প্রিয় চট্টগ্রামকে বলেন, যারা মানব পাচার ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত রয়েছে তাদের ব্যাপারে পুলিশ সোচ্চার রয়েছে। রশিদের ব্যাপারে তার কাছে তথ্য নাই বলে জানান। তবে মানব পাচার ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকলে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত