চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অনেকটাই বিষণ্ন। স্ত্রী হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই চাকরিহীন হয়ে যাওয়ার পর থেকে দুই শিশুসন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন তিনি।
সম্প্রতি দুই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করেছেন বাবুল। ছেলে ভর্তি হয়েছে প্রথম শ্রেণিতে আর মেয়ে প্লে গ্রুপে। সন্তানকে আনা-নেয়ার দায়িত্বটা বেশির ভাগ দিনই পালন করেন তিনি।
বাবুলের সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকাটাইমসের। এ সময় তিনি তার বর্তমান মানসিক অবস্থা, সন্তানকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, স্ত্রী হত্যা মামলাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
এই মুহূর্তে কী করছেন? জানতে চাইলে বাবুল বলেন, ‘শুয়ে আছি। মন ভালো নেই। মানসিক যন্ত্রণা এখনো কাটেনি।’
কোথায় আছেন?
-শ্বশুরবাড়িতেই আছি।
কোথাও যান না?
-খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাসা থেকে বের হই না। মাঝেমধ্যে দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাই।
এভাবে বসে থাকা তো আপনার পক্ষে কঠিন…
-কী করব? আগে তো নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে। নিজেকে এখনো স্বাভাবিক জীবনে নিতে পারিনি। খুবই কষ্ট হয় দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
-এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। মানসিক অবস্থার উন্নতি হলে ভাবব।
দুই সন্তানের কী অবস্থা?
-ছেলেটির অবস্থা এখনো স্বাভাবিক নয়। মেয়েটি স্বাভাবিক হয়েছে। কষ্ট ভুলতে দুজনকেই স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে।
মাঝে শুনলাম বিদেশে যাবেন?
-না, এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। দুই সন্তানকে ছাড়া বিদেশে কীভাবে থাকব। এটা তো সম্ভব না। দেশে আত্মীয়-স্বজন আছে, তাদের কাছে পায় ওরা। একটু তো আনন্দে থাকতে পারে।
চলতি বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের অদূরে সন্তানকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এই ঘটনার কয়েক দিন আগে ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন বাবুল। স্ত্রী হত্যার খবর পেয়ে চট্টগ্রামে ছুটে যান তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ একে জঙ্গি হামলা বলে চিহ্নিত করে আর দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ১১ হাজারের বেশি মানুষ। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বেশ কয়েকজন।
তবে পরে এই ঘটনার তদন্তে জানা যায়, বাবুলের সাবেক বেশ কয়েকজন সোর্স এই খুনে জড়িত। এদের দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর পুলিশ বাবুলকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে।
এরপর বাবুল আর চাকরিতে ফেরেননি। তাকে পদত্যাগ করতে চাপ দেয়ার খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। আর এই পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বাবুলকে। এর আগেই অবশ্য পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করতে আবেদন করেছিলেন বাবুল। ওই আবেদনে তিনি লিখেন, চাপের মুখে চাকরি ছাড়ার আবেদন করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে আবেদন বিবেচনায় আসেনি।
স্ত্রী হত্যার পর থেকেই রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ার ভুঁইয়াপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন বাবুল। চাকরিচ্যুত হওয়ার পরও ঠিকানা বদল হয়নি তার।
চাকরি তো হারালেন। তবে চাকরি পেতে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু সে আবেদন টেকেনি। এটি নিয়ে কী আইনি কোনো লড়াইয়ে যাবেন? জানতে চাইলে বাবুল সংক্ষেপে জবাব দেন, ‘না, এ রকম কোনো পরিকল্পনা নেই।’
স্ত্রী হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তার জবাব ছিল এ রকম- ‘মামলা নিয়ে মাঝে মাঝে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সপ্তাহ খানেক আগেও কথা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’
কথা হয় বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘এমনিতে সে ভালোই আছে। তবে দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে মাঝে মাঝে দুশ্চিন্তার কথা বলে বাবুল।’
সূত্র-ঢাকা টাইমস।