নিউজ ডেস্ক::
ইয়াবা পাচার করে কামাই করা বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এই তালিকার অধিকাংশই টেকনাফের র্শীষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। অনুসন্ধান করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টোকে গ্রেফতারের মাধ্যমে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সিআইডির অর্গনাইজ ক্রাইমের এসএসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র মতে, স্বাভাবিক পাচারকারী ছাড়াও টেকনাফে অন্তত ১৫ জন বড় মাপের ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। এসব বড়মাপের পাচারকারীরাই পুরো বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের নিয়ন্ত্রক। অনেকটা তাদের মাধ্যমেই টেকনাফে তৈরি হয়েছে অন্যান্য ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তবে নিজেদের আধিপত্যের জন্য শেষ মুহূর্তে টেকনাফের অন্তত অর্ধশত ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে এখনো শীর্ষে ওই ১৫ ইয়াবা মার্চেন্ট।
সিআইডির অর্গনাইজ ক্রাইমের এসএসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, টেকনাফের শীর্ষ ১৫ ইয়াবা পাচারকারীরর একজন নূরুল হক ভুট্টো। তাকে গ্রেফতারের পর ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কয়েকটি অজানা দিকে দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ টাকা পাচা
রের ভয়ংকর অপরাধের সাথেও জড়িত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। ভুট্টোর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি তালিকা ও তথ্যই তা নিশ্চিত করছে।
তিনি জানান, ভুট্টোর কাছ থেকে যে তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে তাতে তার নেতৃত্বাধীন ইয়াবা পাচারের সিন্ডিকেটের সারাদেশের একটি ম্যাপ রয়েছে। এতে দেখা গেছে টেকনাফ থেকে বাংলাদেশ সর্বশেষ স্থানের লোকজন তার সিন্ডিকেটে রয়েছে। একই ভাবে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি ধরা পড়েছে। যাচাই করে দেখা গেছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে একাধিক একাউন্ট রয়েছে। বিকাশ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের-ও নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি একাউন্ট রয়েছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব একাউন্টের মাধ্যমে বিপুল টাকা বিদেশ পাচার হয়েছে। ভুট্টোও টাকা পাচারের কথা স্বীকার করেছে। একইভাবে দেশের অভ্যন্তরেও টাকার লেনদেন হয়েছে ওইসব একাউন্টের মাধ্যমে। তার মতো অন্যান্য শীর্ষ সারির ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও বিদেশে টাকা পাচার করেছে। এই বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অর্গনাইজ ক্রাইমের এসএসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম।
এদিকে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পর্যায়েও আলোচিত। বিদেশে টাকা পাচারের ইয়াবা মাফিয়া টেকনাফের হাজী সাইফুল করিমসহ আরো অনেকে রয়েছে বলে অনেক আগেই থেকে জনশ্রুতি রয়েছে। এই তালিকায় আরো রয়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহামদের পরিবার, বাহারছাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দীন, এমপি আবদুর রহমান বদির ভাই পৌর কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান।
গোয়েন্দা ও স্থানীয় তথ্য মতে, ইয়াবা ব্যবসার শুরু থেকেই মানি লন্ডারিং করছে হাজী সাইফুল করিম। তিনি অধিকাংশ টাকা মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন। এছাড়াও দুবাইতেও তিনি টাকা পাচার করেছেন। মালয়েশিয়ায় তিনি গড়ে তুলেছেন নানা ধরণের ব্যবসা। এমনকি গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোমও। দুবাইতেও তিনি গড়ে তুলেছেন র্স্বণের দোকানসহ আরো কিছু ব্যবসা। এই কারণে হাজী সাইফুল করিম প্রায়ই সময় মালয়েশিয়া ও দুবাইতে থাকেন। একইভাবে মালয়েয়িশায় টাকা পাচার করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পরিবার। দু’বছর আগে হঠাৎ উধাও হয়ে যান জাফর আহাদের পুত্র মোস্তাক আহামদ। তিনিও তালিকার র্শীষ ব্যবসায়ী ছিলেন। মোস্তাকের নিরুদ্দেশকে গুম হিসেবে নেয়া হলেও তা সত্য নয়। জনশ্রুতি রয়েছে, মোস্তাক কৌশলে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি সেখানে অবস্থান করে পাচার করা টাকা দিয়ে তিনি সেখানে বড় করছেন। এমপির বদির ভাই মুজিবুর রহমানেরও দুবাইতে স্বর্ণের দোকান রয়েছে। ইয়াবা ব্যবসার টাকা পাচার করে দুবাইতে তার সিন্ডিকেট একাধিক স্বর্ণের দোকান গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও নূরুল হক ভুট্টো, মৌলভী আজিজ উদ্দীন।
সব মিলে অন্তত ১৫ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী বিদেশে টাকা পাচার করছেন।
সিআইডির অর্গনাইজ ক্রাইমের এসএসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিশেষ অভিযানে নেমেছি। তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ছাড় হবে না। একই সাথে তাদের বাড়ি-গাড়ি, জমিসহ যাবতীয় সম্পদেরও খোঁজ নেয়া হবে।’ সুত্র:সিবিএন