একজন মানুষ জীবনে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির প্রেমে পড়তে পারেন। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এই কথাটি বলেছিলেন। প্রেম শাশ্বত, সত্যিকারের প্রেম জীবনে একবারই হয়। এসব নিয়ে নানা তর্কবিতর্ক আছে। গবেষণাও আছে। মানুষের জীবনে কি প্রেম একবার আসে? তাহলে মানুষ একবার সম্পর্ক ভেঙে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে কেন? প্রয়োজনে, জীবনের বাস্তবতায় নাকি নিজের ইচ্ছায়? বুঝতে পারে না মন আসলে কাকে চায়, কী চায়।
হাফিংটন পোস্ট দুই হাজার নারী-পুরুষের ওপর একটি জরিপ করেছিল গত বছর। সেই জরিপে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ নারী ও পুরুষ মনে করেন, জীবনে সাতবার প্রেমে পড়ে মানুষ। তবে দুই হাজার জনের এক-তৃতীয়াংশ মনে করে, ‘সত্যিকারের ভালোবাসা’ জীবনে একবারই হয়। একই মানুষের ওপরও একাধিকবার প্রেমে পড়েন কেউ কেউ। পুরুষদের ১৭ শতাংশ বলেছে, তারা একটি প্রেম চলাকালে আরেকটি প্রেমে পড়েছে। দ্বিতীয় সঙ্গীর সঙ্গে তারা বর্তমানে আছে। এক ধরনের ‘আপস’ ধরে নিয়ে ‘সত্যিকারের ভালোবাসা’ বলছে একে। ৪৫ শতাংশ পুরুষ একসঙ্গে একাধিক প্রেম করেছেন। ৩৯ শতাংশ নারী-পুরুষ বলেছেন, তাঁরা জীবনে একবার প্রেমে পড়েছেন। আর ৪৭ শতাংশ মাত্র একবার প্রেমে পড়েছে। সেই প্রেমিককে তারা বিয়ে করেছে।
এই প্রেমের ধরনও ভিন্ন। কোনোটি প্রথম প্রেম, কোনোটি শুধু সময় কাটানোর বা বায়বীয় প্রেম। কোনোটি শুধু রোমাঞ্চের জন্য। কেউ কেউ চূড়ান্ত প্রেম বলছেন সেটিকে, যেটির পরিণতি ঘর বাঁধা। জীবনের সুখ-দুঃখের সময়গুলো কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটিকেই বলছেন ‘চূড়ান্ত’। এর মধ্যেও চলে আসতে পারে উঁকি মেরে দেখা প্রেম। সেই প্রেমে বেশির ভাগ নারী-পুরুষ শুরুর দিকে সিরিয়াস থাকেন না। তবে কেউ কেউ পা পিছলে বা অন্য কোনো কারণে দ্বিতীয় সঙ্গীকে বেছে নিচ্ছেন।
বারবার প্রেমে পড়াকে অনেকে মনে করেন ভাগ্যের কারণে হয়। এটি ঠিক নয়। তাঁরা নিজেরাই বেছে নেন আরেকটি প্রেমকে।
তিন হাজার জন মানুষের ওপর দ্য গার্ডিয়ান একটি জরিপ করে। সেখানে দেখা যায়, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন একসঙ্গে একাধিক প্রেম করছেন। সহকর্মী, বন্ধুর সঙ্গে তাঁরা এটি বেশি করছেন। ব্যক্তিজীবনেও তাঁরা সুখী। সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কও ভালো। তবু তাঁরা আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।
তাঁদের মধ্যে ২৫ শতাংশ পাঁচ বছর ধরে একই সঙ্গে আরেকটি প্রেম করছে। ২৯ শতাংশ পুরুষ ও ১৯ শতাংশ নারী দ্বিতীয় প্রেমের কারণে বিয়ে বিচ্ছেদ করেছেন। ৬০ বছর বয়সের পরে এবং ৩০ বছর বয়সে একাধিক প্রেম করার প্রতি আগ্রহ প্রবল দেখা যায়। ভালোবাসা পেয়েও তাঁরা মনে করছেন তাঁরা যা চাইছেন, তা পাচ্ছেন না। জীবনে কোনো কিছু নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট থাকেন না। সারাক্ষণ মন নতুন কিছু খোঁজে।
রবীন্দ্রনাথের মতো বলতে হয়, আমার মনের জানলাটি আজ হঠাৎ গেল খুলে/ তোমার মনের দিকে।
শুরু করেছিলাম মার্কেস দিয়ে। শেষটাও হোক তাঁরই কথায়। তিনি বলেছিলেন, ‘বিবাহিত জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সুখ নয়, স্থায়ীত্ব।’