প্রকাশিত: ১১/১০/২০১৬ ৭:৩৩ এএম

malumghatসেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও ::

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্য বা হুমকি দিয়ে আদায় করা হচ্ছে ঘুষ। এতে অতিষ্ট পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। কাগজ পত্র দেখার নামে চলছে নিরব চাঁদাবাজি। হাইওয়ে ফাঁড়ি পুলিশের অব্যাহত চাঁদাবাজির কারণে এলাকার ব্যবসায়ী ও গাড়ী মালিকদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়েছে। এ চাঁদাবাজি বন্ধের দাবীতে মালিক শ্রমিকরা সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।

জানা গেছে, সরকার মহাসড়ক গুলোতে অপরাধ নিয়ন্ত্রন করতে হাইওয়ে পুলিশ গঠন করে। সড়কের নিরাপত্তার পাশাপাশি অবৈধ যানবাহন দেখার বিষয়টি ও দেয়া হয় এ বিশেষ পুলিশকে। আর মালুমঘাটে রয়েছে একটি হাইওয়ে পুলিশের ফাঁড়ি। এ ফাড়িঁর সার্জেন্ট আশিকুর রহমান মহাসড়কের  মেধাকচ্ছপিয়া ঢালায় যানবাহন থামিয়ে আদায় করছে চাঁদা। রেহাই পাচ্ছে না নিম্নবিত্ত ড্রাইভার থেকে শুরু করে মালিক শ্রমিকরা । সামান্য অযুহাতে ধরে এনে দাবী করছে মোটা অংক আর ঘুষ দিতে না পারলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সামান্য চুপ হয়ে যায়। কয়েক দিন যেতে না যেতেই আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠে উক্ত সার্জেন্ট আশিক ।

জানা যায়, মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে সার্জেন্ট আশিকুর রহমান গত ২৩ জুলাই যোগদানের পর থেকে তার অব্যাহত ঘুষ, আটক, ছাড় বাণিজ্যসহ অহরহ অভিযোগ উঠেছে। কেউ প্রতিবাদ করলে মামলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের হয়রানি করবে বলেও হুমকি দেয় তিনি। তার এহেন কর্মকান্ডে পুরো হাইওয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মালিক শ্রমিকসহ সচেতন এলাকাবাসী। তারা জানান একজন পুলিশ কর্মকর্তার ইতিবাচক ভূমিকা পুরো পুলিশ প্রশাসনের উপর বর্তায়। তার এ অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ না হলে পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি দিন দিন ক্ষুন্ন হবে বলে দাবী করেন তারা।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, সার্জেন্ট আশিকুর রহমান যানবাহন থামিয়ে প্রথমে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দিলে সব কিছু ঠিক থাকার পরও জরিমানার নামে একটা কাগজ ধরিয়ে দেয়। ফলে চালকরা বাধ্য হয়ে হয়রানী থেকে বাঁচতে দাবীকৃত চাঁদা দিয়ে আসছে। প্রাইভেট কার চালক নুরুল হক জানান, তার গাড়ীর ( যার নাং ঢাকা মেট্্েরা গ ১৭-৯১২৭) মালিকের পরিবারের সদস্যরা মালুমঘাট হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করে ফেরার পথে প্রাইভেট কার আটকিয়ে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার প্রাইভেট কারকে ভাড়ায় চালাচ্ছে মিথ্যা অভিযোগ এনে জরিমানা করা হয়। এভাবে নানা ধরনের যানবাহন থেকে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা আদায় করছেন তিনি ।

অভিযোগ উঠেছে, বিগত ১মাস ধরে সার্জেন্ট আশিকুর রহমান ডম্পার চালক জহির আহমদকে মালুমঘাট ষ্টেশনে আটকিয়ে ১৫ হাজার টাকা, পর্যটকবাহী চেয়ারকোচ ড্রাইভার মীর আহমদকে খুটাখালী ষ্টেশনে বেরিকেট দিয়ে ১০ হাজার টাকা, কভারভ্যান চালক মনজুরকে খুটাখালী  নয়াপাড়া ব্রীজ এলাকায় গাড়ি রাখার দায়ে ২০ হাজার টাকা, পিক-আপ ড্রাইভার মনজুর আলমকে ডুলাহাজারা ষ্টেশন থেকে লাকড়ি ভর্তি গাড়ি আটকিয়ে ৫ হাজার টাকা, ডাম্পার চালক নূর আহমদের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা, টমটম ড্রাইভার শাহাব উদ্দিনকে মালুমঘাট বাইরোটে আটক করে ৫ হাজার টাকা, সিএনজি চালক শাহাব উদ্দিন মালুমঘাট হাসপাতালে ডেলিভারী রোগী নেয়ার সময় আটক করে ৭ হাজার টাকাসহ প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। এছাড়াও মুবিল কোর্টের নামে ড্রাইভারদের মারধর ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর  অভিযোগও অহরহ। তার এ বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে এবং বদলী ঠেকাতে ইতিমধ্যে হাইওয়ে পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

পরিবহন মালিকরা অভিযোগ করে জানান, সেতু মন্ত্রী কর্তৃক হাইওয়ে সড়কে ত্রি হোইলার গাড়ী চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দেয়ায় হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা বাহিনী উক্ত ত্রি হোইলারের কোন অবস্থাতেই মহাসড়কে চলাচল করতে দিচ্ছেনা। তবে সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস ভর্তি করতে রাত ১২টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ ও দেয়া হয়েছে। এছাড়া টমটম গাড়ীতে বিদ্যুতের চার্জ দেয়ার জন্য যেতে হয় বিভিন্ন স্টেশনে। কিন্তু ঈদগাহ থেকে চকরিয়া পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন না থাকায় গ্যাস ভর্তির জন্য গাড়ী চালকদের যেতে হয় পটিয়াসহ পার্শ্ববর্তি স্টেশনে। তবে মালুমঘাট হাইওয়ে ফাঁড়ি পুলিশের সার্জেন্ট আশিক, কনস্টেবল বাকী বিল্লাহ ভোর থেকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে উৎপেতে থেকে এসব ত্রি হোইলারের সিএনজি আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করে আসছে। এছাড়া বিভিন্ন স্টেশনে থাকা টমটমের গ্যারেজ থেকে টমটম গাড়ী আটক করে ফাড়িতে নিয়ে যায়। অসহায় টমটম গাড়ী চালকদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে এসব টাকা থেকে নামে মাত্র মামলা দিয়ে সরকারকে দেখানো হচ্ছে সামান্য ২শ টাকার জরিমানার স্লিপ । এ চাঁদাবাজি বন্ধের দাবী জানিয়ে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গত অক্টোবর অভিযোগ দায়ের করেছে।

অভিযুক্ত সার্জেন্ট আশিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে, ঘুষের ব্যাপারে জানতে চাইলে দায়িত্বরত মুন্সী বাকি বিল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এসপি রেজাউল করিম জানান, খোঁজ খবর নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত

যুক্তরাজ্যের প্রেস মিনিস্টার হলেন সাংবাদিক আকবর হোসেন

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন বিবিসি প্রতিনিধি আকবর হোসেন মজুমদার। রবিবার ...

আমাদের নিয়ত সহিহ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হলেই নির্বাচন: সিইসি

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন নতুন নির্বাচন কমিশনার ...

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ...

রামুতে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন

কক্সবাজারের রামুতে আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা ‘ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ’ এর শিক্ষা প্রকল্পের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ও প্রকল্প সমন্বয়কারির ...