আজ থেকে ২৪ বছর আগে আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ অক্টোবর আমার মহিয়ষী মা আলকিস খাতুন ইন্তেকাল করেছেন। তবে মা’র জন্য দুইযুগ ধরে দোয়া করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। আমীন।
কবির ভাষায়-
‘মায়ের জন্য ফেরদাউস আমি চাই
বেহেস্তে যেন মায়ের দেখা পাই
মায়ের জন্য ফেরদাউস আমি চাই।’
হাদীস শরীফে আছে রসুল সঃ এর সাহাবি হযরত আলক্বমা তাঁর ইন্তেকালের সময় কালেমায়ে তাইয়্যেবা পড়তে পারছিলেন না। কালেমা তাঁর মূখ থেকে আসছিল না। আল্লাহর রসুল সঃ সেখানে উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলেন (এত বড় সাহাবা হযরত) আলক্বমার কি সমস্যা। জানতে পারলেন হযরত আলক্বমার মা (তখনো জীবিত ছিলেন) তাঁর উপর কোন কারণে ব্যথিত ছিলেন। রসুল সঃ তাঁর মাকে অনুরুধ করলেন হযরত আলক্বমাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য। মা ক্ষমা করে দেয়ার পর হযরত আলক্বমা ভালমত কালেমা তাইয়েবা পাঠ করে ইন্তেকাল করেন। মা ‘কে কষ্ট দিলে এরকমই হয়ে থাকে।
বিশ্বনবী মুহাম্মদ সঃ মহিলাদের মর্যাদা সম্মুন্নত করেছেন। তাদের অধিকারের কথা বলেছেন। তৎকালনি জাহেলী সমাজে ঘৃণার পাত্র বলে আখ্যায়িত করে মহিলাদের জীবন্ত কবর দেয়া হত। বিশ্বনবী সঃ সেই অসভ্য প্রতা রোধ করে মহিলাদের সম্মানের আসনে বসিয়েছেন। বলেছেন ‘নারী পুরুষ সবাইকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে’। পিতা-মাতার সম্পদে ও স্বমীর সম্পদে তাদের অংশ সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। মাকে বসিয়েছেন সম্মানের উচুঁ আসনে। মহানবী বলেছেন ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত’। মা-বাবা যা দোয়া করেন তা নিঃসন্দেহে আল্লাহর দরবারে পৌছাঁয় এবং আল্লাহ তা কবুল করেন বলে হাদিস শরীফে আছে। বিশ্বনবী সঃ আরো বলেছেন ‘মা-বাবাকে কষ্ট দেয়া কবিরাহ গোনাহ বা বড় গোনাহ’।
মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার, মা-বাবার সেবা করা আল্লাহর কাছে জিহাদের চেয়েও উত্তম। এক হাদিসে আছে ‘এক সাহাবী ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা রেখে আল্লাহর রসুলের কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি প্রর্থনা করলে তাকে তাঁর মা-বাবার সেবা করার নির্দেশ দিয়ে ছিলেন’। অপর এক হাদিসে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ‘আমি রসুল করিম সঃ কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর কাছে কোন কাজটি সবচেয়ে প্রিয়? তিনি জবাব দিলেন, যথা সময়ে নামাজ পড়া। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম তার পরে কোনটি? তিনি জবাব দিলেন, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম তার পরে কোনটি? তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা’।
কোন নেতা নয়, পীর নয়, বউ নয়, সন্তানের কাছে মা-বাবা-ই বড় মুরুব্বি। তাই ‘আপনার রব আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্যকারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। যদি তোমার জীবদ্দশায় তাদের একজন কিংবা ঊভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদের প্রতি (বিরক্তিকর শব্দ) উহ পর্যন্ত বলো না, আর তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলবে। তাদের সামনে বিনীতভাবে নম্রতার বাহু অবনত কর এবং বল, হে! আমার প্রতিপালক তাঁদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন। যেরূপ তাঁরা শৈশবকালে আমাকে লালন পালন করেছেন’। [রাব্বির হামহুমা কামা রাববাইয়ানি ছাগীরা]।(সুরা বনী ইস্রাঈল, আয়াত নং-২৩,২৪)।
সব সময় আমি ও আমার সন্তানরা মিলে মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, শিক্ষক ও ইন্তেকাল হওয়া মুরুব্বিদের জন্য দোয়া করে থাকি। পারলে তাদের কবর জিয়াত করে থাকি। তাদের মাগফিরাতের জন্য দান ছাদকা করে থাকি। রসম হিসেবে নয় মাগফিরাতের জন্য ইন্তেকালের দিন মা’র স্মরণে বিশেষভাবে দোয়ার আয়োজন করে থাকি। এতে করে বাচ্চারা যেন মুরুব্বিদের স্মরণ করা শিখে এবং আমাদের জন্যও তাদের দোয়া করার অভ্যাস গড়ে উঠে। পরপারে চলে গেলেও যেন তারা আমাদের জন্য দোয়া করতে থাকে।একটি পরিবারে ছেলে-মেয়েদের এই অভ্যাস গড়ে তোলা প্রত্যেক মা-বাবার স্বার্থ হওয়া দরকার।
হযরত আবু হুরায়রা থেকে বণির্ত অপর এক হাদিসে আছে- আল্লাহর রসুল বলেছেন ‘মানুষ মারাগেলে তিনটি জিনিস ছাড়া তার সব কিছু বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১.ছাদকায়ে জারিয়া বা সমাজ সেবামূলক কাজ, যা অব্যাহত থাকে এবং জনগণ উপকৃত হয়ে থাকে। ২.উপকারী জ্ঞান (উপকারী বই, লেখালেখি, তার শিক্ষায় সু-শিক্খিত শিক্ষার্থী)। ৩.সু-সন্তান (চরিত্রবান ছেলে-মেয়ে) যারা বাবা-মা’র জন্য মৃত্যুর পরেও দোয়া করবে’।(মুসলিম)
আজ আমার মা’র ২৪ তম ইন্তেকাল বার্ষিকীর এই দিনে মা’র জন্য এবং চলে যাওয়া সকল মুরুব্বিদের জন্য মনভরে প্রাণভরে দোয়া করছি। আমার সকল বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীদের নিকট আমার মা’র জন্য দোয়া কামনা করছি। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমীন।
আসুন আমাদের মধ্যে যাদের মা-বাবা এখনো জীবিত আমরা তাদের সেবা যত্ম করে এবং তাদের দোয়া নিয়ে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনকে সুন্দর করি। এই শিক্ষা গুলো যেন আমরা পরিবারে এবং সমাজে চর্চা করতে চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আমীন। ১১.১০.২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ। #