নিউজ ডেস্ক ::
সোফায় শুয়ে টিভি দেখছিল আট বছরের শিশু আখতার মাহমুদ মাহির। পাশে বসে কাগজে কিছু একটা দেখছিল সাড়ে চার বছরের তাবাসসুম তাসনিম টাপুর। আর তাদের মনোযোগ ভেঙে দুজনের মুখে একটি প্লেট থেকে ভাত তুলে দিচ্ছিলেন খালা নিনজা। আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দুই সন্তান মাহির ও টাপুর। গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর বনশ্রীতে শিশুদের নানা মোশাররফ হোসেনের বাসায় এ রকম চিত্র দেখা গেছে। তাদের মা মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৫ জুন সকালে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছোট্ট শিশু মাহির। নির্মম ঘটনার পর থেকে এখানেই আছে তারা। মিতু হত্যার তদন্ত নিয়ে চাঞ্চল্যকর নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার বনশ্রীর বাসাতেই কথা হয় এসপি বাবুল আক্তারের সঙ্গে। মামলার বাদী হিসেবে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার বিকেলে বাসায় ফিরেছেন তিনি। বাবুল আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাইগ্রেনের ব্যথাটা বেড়েছে। কমানোর জন্য রেস্ট নিচ্ছি।’ কথা কিছুদূর চলতেই বাবুল আক্তারের কোলে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাহির। ছোট্ট মাহিরকে আদর করতে থাকলে, মেয়ে টাপুরও এগিয়ে আসে বাবার কাছে। দুজনকে কোলে নিয়ে বাবুল ফিরে যান পুরনো প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মায়ের বিষয়ে মাহির কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না। ডাক্তারও বলেছেন কোনো বিষয়ে তাকে চাপ না দেওয়ার জন্য। ছেলেটা কবে যে ট্রমা থেকে মুক্ত হতে পারবে আল্লাহই জানেন। আজ সকাল ৮টার দিকে ঘুম থেকে উঠেই আমাকে বলেছে—বাবা, রাতে মাকে দেখেছি। মা আমাকে ভাত খাইয়ে দিয়েছে। ছেলের এমন কথা শুনে বুকটা ফেটে যায়। প্রতিদিন কত আদর করে দুই সন্তানকে মিতু ভাত খাওয়াত, তা চোখে সারাক্ষণ ভাসে। এই দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকব বলতে পারেন?’ বাবুল আক্তার বলেন, ‘আল্লাহর কাছে চাওয়া ছিল, একটি সুখী পরিবার। মিতু ও দুই সন্তানকে নিয়ে আমি খুব সুখী ছিলাম। ব্যস্ততার কারণে সন্তানদের আমি খুব একটা সময় দিতে পারতাম না, মা হিসেবে মিতু আদর দিয়ে সেটি পুষিয়ে দিত। একটি ঘটনা আমার সুখের সংসার তছনছ করে দিয়েছে।’ আক্ষেপের সুরে বাবুল আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার রাতে কথা বলার জন্য ডিবি অফিসে যাওয়ার পর কিছু ঘটনা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। শনিবার মিতুকে নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক কথা লেখা হয়েছে। আমার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, দুটি সন্তান সারাক্ষণ মায়ের জন্য ছটফট করছে। সে অবস্থায় গণমাধ্যম নিহত নারীর চরিত্র হরণ করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এটা কিভাবে সম্ভব হলো, জানতে ইচ্ছে করে।’ কবে চাকরিতে যোগ দেবেন জানতে চাইলে বাবুল আক্তার বলেন, ‘দুটি বাচ্চা এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি, আমিও না। এ অবস্থায় আরো কিছুদিন ছুটিতে থাকতে হবে। শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু বারবার মিতুর কথা মনে পড়ে।’ শুক্রবার রাতে তাঁকে কেন ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে বাবুল আক্তার বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে আমি কোনো কথা বলব না।’ – কালেরকন্ঠ
পাঠকের মতামত