ধারণা করা হচ্ছে, গত ১২ নভেম্বর টেকনাফ থেকে নির্মাণসামগ্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উধাও হওয়া ট্রলার দুইটি।
কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বিপরীতে মিয়ানমারের নলবন্ন্যা নামের এলাকাটির অবস্থান। ওই এলাকার মংডু শহরের সাথে নাফনদীর সংযোগ খালটির নাম বাঘগুনা। ওই বাঘগুনা খালের পাশের উপকুলে পাশাপাশি রয়েছে দুইটি ট্রলার। পাশের আসে নিমার্ণ সামগ্রী রড, সিমেন্ট ও বালি। ধারণা করা হচ্ছে, গত ১২ নভেম্বর টেকনাফ থেকে নির্মাণসামগ্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উধাও হওয়া ট্রলার দুইটি।
মিয়ানমারের আকিয়াব শহরের অবস্থানরত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার এক কর্মকর্তা ছবিটি পাঠিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মাধ্যমে ছবিটি সংগ্রহ করেছেন। এই দুইটি সেন্টমার্টিনগামি নিমার্ণ সামগ্রী বোঝাই ট্রলার।
তবে ওই ট্রলারে থাকা ৭ মাঝি-মাল্লা কোথায় আছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একই সঙ্গে গত ১৩ নভেম্বর উখিয়ার নাফনদী সীমান্ত থেকে মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এক জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনও হদিস নেই অপর ৪ জনের। ফলে ১১ জনের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইতোমধ্যে আরাকান আর্মির পক্ষে গত ১২ নভেম্বর ২টি ট্রলারসহ ৭ মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফের ২ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, আরাকান আর্মি জানিয়েছে নাফনদী থৈকে নিমার্ণসামগ্রী বোঝাই দুটি ট্রলার সহ কাউকে তারা আটক করেনি। তারপরও আরকান আর্মিসহ ওপারের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা চলছে।
গত ১২ নভেম্বর টেকনাফ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফনদীর মোহনা থেকে দুটি ট্রলারসহ ৭ মাঝিকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করা হলেও এই নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিমার্ণ সামগ্রী নেয়া নিষিদ্ধ রয়েছে। সেন্টমার্টিনের কথা বলে এসব নিমার্ণ সামগ্রী মিয়ানমারে পাচারের অভিযোগ উঠে।
যদিও ট্রলার মালিক এবং টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, তার মালিকানাধীন এসবি রাসেল ও আব্দুর রবের মালিকানাধীন এসবি ফারুক নামে দুটি সার্ভিস ট্রলার রড, বালু ও সিমেন্ট ভর্তি করে সেন্টমার্টিন নেওয়ার সময় ১২ নভেম্বর দুপুরে নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে নিয়ে গেছে আরকান আর্মির সদস্যরা। ট্রলার দুটিতে ৭ জন মাঝিমাল্লা রয়েছেন। গত ৭ দিনেও ফেরত দেয়নি। স্থানীয় ও প্রশাসন ও বাংলাদেশ সরকারের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ট্রলার দুটি সহ ফেরত আনার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ট্রলারটির মধ্যে এসবি রাসেলের রয়েছেন ৩ জন। এরা হলেন সেন্টমার্টিনের রহমান, নুর আলম ও টেকনাফের ইমরান। এসবি ফারুকে রয়েছেন ৪ জন। এরা হলেন, মোস্তাক, ফায়জুর, টেকনাফের আরমান ও সাদেক।
এদিকে গত ১৩ নভেম্বর উখিয়ার নাফনদী সীমান্ত থেকে মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এক জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনও হদিস নেই অপর ৪ জনের।
১৬ নভেম্বর মরদেহ পাওয়া গেছে পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়ার মৃত মোহাম্মদ হোসেন এর ছেলে ছৈয়দুল বশরের। তিনি ছিলেন ৫ জনের একজন। তার সাথে যাওয়া অপর ৪ জনের হদিস মিলেনি এখনও। এই চারজন হলেন, পূর্ব ফারিরিবিল এলাকার মনজুর আলমের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ, নুর মোহাম্মদের ছেলে লুৎফুর রহমান, জিয়াবিল হকের ছেলে সাইফুল ইসলাম ও মুহাম্মদ আবদুল্লাহর ছেলে ইউছুফ জালাল।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ে অপর ৪ জনকে ফেরত আনতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তবে মরদেহ ভাসতে বলে শোনা গেলেও এখনও কোন মরদেহ এপারে পাওয়া যায়নি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) যারীন তাসনিম তাসিন জানিয়েছেন, মাছ শিকারে গিয়ে দুদিন আগে ৫ জন বাংলাদেশী অপহরণ হয়। এদের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অপর ৪ জনকের ব্যাপারে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগে চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্টরা