জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) মিয়ানমারের পক্ষে না দাঁড়ানোয় চীনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বাংলাদেশ। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-কে লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে নতুন বছর ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা করছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত ২১ ডিসেম্বরে সব ধরনের সহিংসতা রোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে রেজল্যুশন গ্রহণ করা হয়। সেই সঙ্গে ২,৬৬৯ নম্বর রেজল্যুশনে রাখাইন সংকটের মূল কারণ এবং বাংলাদেশে সাময়িকভাবে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, টেকসই প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে জোর দেয়া হয়।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মোমেন বলেন, মিয়ানমার নিয়ে আনা রেজল্যুশনে নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য রাষ্ট্র আপত্তি তোলেনি, বিষয়টিতে বাংলাদেশ খুশি। চীনসহ আরও তিনটি সদস্য রাষ্ট্র এ বিষয়ে ভোট থেকে অনুপস্থিত থেকেছে। সেই সঙ্গে এ রেজল্যুশন তৈরিতে শেষ পর্যন্ত এতে যুক্ত থেকেছে। এতে করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা এবং এ অঞ্চল ও তার বাইরের নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব বুঝতে পেরে ভোট থেকে নিজেকে অনুপস্থিত রাখার সিদ্ধান্তের কারণে চীনের সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন লেখেন, গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ মানবিক সহায়তাসহ ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয়ভাবে অনেক চেষ্টার পরও এখন পর্যন্ত তাদের প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমনকি প্রত্যাবাসনের জন্য চীনের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয়ভাবেও কাজ চলছে। এদিকে মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকে আরও কঠিন করে দিচ্ছে। সংকট আমলে না নেয়া হলে এর কারণে এ অঞ্চল ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশন রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারে মানবাধিকার সুরক্ষায় একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান এবং মিয়ানমারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমার নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা নিয়েও বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে ঢাকা।