দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। তবে নতুন এই তৎপরতায় তাদের আসল উদ্দেশ্য কী সে সম্পর্কে নিশ্চিত নয় বাংলাদেশ। তবে দেশটির সঙ্গে ‘সরল বিশ্বাসে’ আলোচনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তালিকা যাচাই-বাছাই করতে বাংলাদেশ সফরে আসে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাদের মনে কী আছে, সেটি আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। সেটি সময় বলে দেবে। তবে আমরা সরল বিশ্বাসে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং গত পাঁচ-ছয় মাসে তাদের দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। সময় বলে দেবে— আগামী ছয় মাসে এটি টেকসই হবে কি না।
মাসুদ বিন মোমেন জানান, গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। তবে টেকসই প্রত্যাবাসন ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না বাংলাদেশ।
সচিব বলেন, ‘১১ লাখকে আমরা স্থান দিয়েছি এবং তাদের দেখভাল করছি গত পাঁচ বছরের বেশি সময়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আমাদের সাহায্য করছে। সুতরাং প্রত্যাবাসন টেকসই হবে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না।’
মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল টেকনাফে। ছবি: সংগৃহীত
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘প্রত্যাবাসন টেকসই হওয়ার পরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে। আপনারা যেভাবে দেখছেন বিষয়টি আসলে সেরকম নয়। এটি কালকে শুরু হয়ে যাবে বা পরশু শুরু হয়ে যাবে, বিষয়টি সে রকম নয়।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী কয়েক মাস গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে।
সর্বাত্মক চেষ্টা করেও গত পাঁচ বছরে সরকার একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে পারেনি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বারবার আশ্বাস দিলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা টালবাহানা করছে। ইতোমধ্যে দেশটিতে সামরিক শাসন ফিরে আসায় প্রত্যাবাসনের আলোচনা অনেকটা এতদিন থমকে ছিল। তবে সম্প্রতি দেশটির একটি প্রতিনিধি দলের সফরের পর আবার নতুন করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে