মিয়ানমারের ছোঁড়া গোলার আঘাতে এক বাংলাদেশি ও এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবারই কড়া প্রতিবাদ জানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ছাড়া এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার–বাংলাদেশ সীমান্তে বর্তমানে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্যই রাষ্ট্রদূত মোয়েকে তলব করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানাবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ জোরাল করেছে আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী কয়েকটি গোষ্ঠী। সংঘাত বাড়ার পর সবচেয়ে বেশি গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের উলুবনিয়া, তুলাতুলি, কাঞ্জরপাড়া, উখিয়ার পালংখালির আনজুমান পাড়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তে। এতে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে আবার দেখা দিয়েছে উত্তেজনা, বেড়েছে অনুপ্রবেশের শঙ্কা।
এ সংঘাতের কারণে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে গতকাল সোমবার মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া একটি গোলার আঘাতে ঘুমধুম সীমান্তে একজন বাংলাদেশি ও একজন রোহিঙ্গা নিহত হন।
সোমবার এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী জানায়, গত ৩ দিনে প্রাণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনীর ৬২ জন সেনা। পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও), সেনাবাহিনীর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বাড়িয়েছে। সাগাইং, ম্যাগওয়ে এবং মান্দালয় অঞ্চল, কাচিন এবং কারেন রাজ্যে ঘটেছে এসব ঘটনা। ইরাবতীকে এসব তথ্য দিয়েছে পিডিএফ ও ইএও। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি জান্তা সরকার।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। নির্মমভাবে দমন করা হয় বিক্ষোভকারীদের। জবাবে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় গণতন্ত্রকামীরা। বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় তারা। পাশাপাশি আরাকান আর্মি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি ও ট্যাঙ্গ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি নিয়ে গঠিত থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্স সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। গত তিন বছরের গৃহযুদ্ধে ৩ শর বেশি সেনা চৌকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো।
২০২২ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশ সীমান্তে। তখনও কিছু গোলা এসে পড়ার ঘটনাও ঘটে।
পাঠকের মতামত