আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১/০১/২০২৫ ৯:৩২ পিএম

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ থামাতে চীনের কূটনৈতিক তৎপরতার ফল মিলল। বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) দেশটির সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। খবর দ্য ইরাবতীর।

গত বুধবার (২৯ জানুয়ারী)উত্তর শান রাজ্যের লাশিওতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৩ মিনিটে পড়ুন

যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তানুসারে গোষ্ঠীটি চলতি বছরের জুনের মধ্যে উত্তর শান রাজ্যের বৃহত্তম শহর লাশিও থেকে যোদ্ধাদের প্রত্যাহার সম্পন্ন করবে। এমএনডিএএ’র যোদ্ধারা জান্তাবাহিনীর সাথে প্রায় এক বছরের সংঘাতের পর গত বছরের আগস্টে শহরটি দখল করে নেয়।

২০১৯ সালে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী তথা মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএএলএ) ও আরাকান আর্মি (এএ) মিলে একটি জোট গঠন করে যার নাম দেয়া হয় থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। এটি ৩বিএইচএ নামেও পরিচিত।

এর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হল এমএনডিএএ যা কোকাং আর্মি নামেও পরিচিত। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন ১০২৭’। জোটের এই অভিযান ব্যাপক সফলতা পায়।

আরও পড়ুন: জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াল মিয়ানমার জান্তা

এমএনডিএএ চীন সীমান্তবর্তী শান প্রদেশের রাজধানী লাশিও ও আশপাশের বিশাল একটা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের দখলে নেয় আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটি এখন রাখাইনকে কেন্দ্র একটি ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

একাধিক রিপোর্ট মতে, মিয়ানমারের বেশিরভাগ এলাকাই এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দখলে। যেমন বাংলাদেশ সীমান্তবর্বী মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের প্রায় পুরোটাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। হারানো এসব ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে মরিয়া জান্তা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লড়াইয়ে ব্যবহার করছে যুদ্ধবিমান ও ড্রোনের মতো অত্যাধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্র।

এই অবস্থায় চীনের জোর কূটনৈতিক তৎপরতায় চলতি মাসে এমএনডিএএ ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যদিয়ে উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রতিশ্রুতি দেয়। চুক্তির আওতায় চলতি বছরের জুন মাসের শেষ হওয়ার আগেই লাশিও শহর থেকে নিজেদের যোদ্ধাদের প্রত্যাহার চূড়ান্ত করবে এমএনডিএএ।

আরও পড়ুন: প্যারামোটর ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে মিয়ানমার জান্তা

চলতি মাসের গোড়াতেই জান্তা সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রী কান জাও দাবি করেন, কিয়াউকফিউতে জান্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে নিরুপদ্রবে কাজ চালাচ্ছে চীনা ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাগুলো।

তিনি আরও জানান, জান্তা সরকার পরিচালিত সংস্থা ‘কিয়াউকফিউ এসইজেড কনসোর্টিয়াম’ এবং চীনা সংস্থা সিআইটিআইসির যৌথ উদ্যোগে নির্মীয়মাণ ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ও গভীর সমুদ্রবন্দরে কোনো হামলা চালাননি ওই এলাকায় সক্রিয় এমএনডিএএ যোদ্ধারা।

গত দেড় বছরের গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। কিয়াউকফিউ সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমেই ভারত মহাসাগরের সঙ্গে বিকল্প বাণিজ্যপথ তৈরি করতে সক্রিয় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার। এই বন্দর ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘চীন-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডরে’র অন্যতম অংশ।

আরও পড়ুন: মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের মধ্যেই নির্বাচনের পরিকল্পনা

তবে বিদ্রোহী সশস্ত্র জোটের বৃহত্তম শরিক আরাকান আর্মি ও আরেক গোষ্ঠী টিএনএলএ জান্তার সঙ্গে আপসে আসতে নারাজ। পরবর্তী সময়ে জান্তাবিরোধী যুদ্ধে শামিল হওয়া ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) ও চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ) এবং সু চির সমর্থক স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর সশস্ত্র বাহিনী ‘পিপল্‌স ডিফেন্স ফোর্স’ (পিডিএফ)-ও এখনও লড়াই থেকে সরে আসার বার্তা দেয়নি।

শান প্রদেশে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ এবং তাদের সশস্ত্র শাখা শান স্টেট আর্মিও জান্তাবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় বলে জানা গেছে।

পাঠকের মতামত

মার্কিন সহায়তা স্থগিত:থাই হাসপাতাল ছাড়ছে মিয়ানমারের শরণার্থীরা

বিদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে। ইতোমধ্যেই ...

বাংলাদেশেও সব মার্কিন সহায়তা বন্ধ, জানিয়ে দিল ইউএসএআইডি

মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির ব্যয় অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশনা ...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে ইউএনএইচসিআর

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন যে তার সংস্থা রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে ...

যুক্তরাষ্ট্রের সব বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করেছেন সদ্য শপথ নেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ...

নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তদন্ত করবে জাতিসংঘ

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তদন্ত কর‌বে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে ...