মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে সাবেক স্ত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের জোরারগঞ্জ থানার মাঈন উদ্দিন পেট্রোল পাম্পের পশ্চিম পাশে মকবুল আলী মাঝির বাড়ির সামনে থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম ওমর ফারুক (৩০)। পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী। সে হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মেহেদীনগর গ্রামের সুজাউল হকের পুত্র। এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ওমর ফারুকের সাবেক স্ত্রী জেসমিন আক্তার সোনিয়া, শালী আবিদা সুলতানা ও স্ত্রীর প্রেমিক নুরুল আবছার রুবেলকে আটক করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের বিষয়ে নিহত ফারুকের ছোট ভাই মোঃ ইব্রাহিম বাদি হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
নিহত ওমর ফারুকের ছোট ভাই মোঃ ইব্রাহীম বলেন, তার ভাই বিভিন্ন কাপড় দোকানে পাইকারীতে কাপড় বিক্রি করতো। ৫ বছর পূর্বে ছাগলনাইয়া উপজেলার গোপাল ইউনিয়নের নাঙ্গলমোড়া এলাকার জেসমিন সুলতানা সোনিয়াকে প্রেম করে বিয়ে করে। পরবর্তীতে তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান হয়। যার বর্তমান বয়স ৩বছর। তাদের সংসারে দুই বছর পূর্বে থেকে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। এসময় তার ভাবী সোনিয়া ওমর ফারুকের সাথে ঘর করবেনা বলে এক বছর আগে তাকে ডির্ভোস দেয়। পরে সোনিয়াকে দেন মোহরের সব টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। এসময় তার ভাতিজা তার ভাবীর কাছে থাকার সিদ্ধান্ত হয়। সন্তানের জন্য প্রতিমাসে টাকা দিতো ওমর ফারুক। তার ভাই ভাবীর মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেলেও তার ভাবী সোনিয়া গত এক মাস প্রায় সময় ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করতো। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে তার ভাবী তার ভাইকে তাদের ভাড়া বাসায় জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপাহাড় এলাকার ফকির সওদাঘরের বাড়িতে যেতে বলে। ভাবীর কথামতো ভাইয়া রাত্রে ফল নিয়ে বাসায় যায়। ভাবীর বাসায় যাওয়ার আগে ভাইয়া বাড়িতে মাকে বলে যায় যে তার বাচ্চাকে দেখার জন্য রাত্রে যাবে। যাওয়ার সময় ছেলের জন্য কিছু ফল ও মিষ্টি নিয়ে যেতে বলে। তার ভাই ভাবীর কথা মতো রাতে ফল ও মিষ্টি নিয়ে জোরারগঞ্জ থানাধীন চিনকির আস্তানা বাসায় যায়। রাতে ভাবী জেসমিন আক্তার সোনিয়া, শালি আবিদা সুলতানা ও ভাবীর প্রেমিক রুবেল গলা কেটে ওমর ফারুককে হত্যা করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, ভাবী ভাইয়াকে ডিভোর্স দেওয়ার পরও ভাইয়ার সাথে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের চেষ্ঠা করতো। পরিকল্পিত ভাবে তারা আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
আবিদা ও রুবেল হাত পা চেপে ধরে আমি গলায় ওড়না পেছিয়ে হত্যা করি
নিহত ওমর ফারুকের সাবেক স্ত্রী জেসমিন আক্তার সোনিয়া থানা পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ফারুকের সাথে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরও সে আমি ও আমার ছোট বোনকে ডিষ্টার্ব করতো। রুবেলের সাথে আমার সম্পর্ক সে কিছুতে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু আমি তো এখন তার স্ত্রী না। এজন্য আমি আবিদা ও রুবেল সীদ্ধান্ত নিই তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে রাতে আমার বাসায় আসতে বলেছি। রাত ১২টার সময় সে বাসায় আসা মাত্র আমি রুবেলের মোবাইলে ম্যাসেজ দিই। কিছুক্ষণ পর রুবেলও বাসায় আসে। ফারুক বাসায় এসে আমার ছোট বোনের গায়ে হাত দেয়। তখন আমি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি। এরপর আবিদা ওর দুপা, রুবেল দুহাত বেঁধে ফেলে আমি ওড়না গলায় পেছিয়ে খুন করি। পরে আমরা তিনজন মিলে তার লাশ রাস্তার পাশে রেখে আসি।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল কবির জানান, শুক্রবার সকালে জোরারগঞ্জ থানাধীন মাঈন উদ্দিন পেট্রোল পাম্পের পাশে একটি বাড়ি সামনে থেকে ওমর ফারুকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) প্রেরণ করা হয়েছে। পরে নিহতের স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওমর ফারুকের স্ত্রী জেসমিন আক্তার, শালী আবিদা সুলতানা ও প্রেমিক রুবেলকে আটক করে। আটককৃতরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এই বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানায় নিহতের ছোট ভাই ইব্রাহীম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে
পাঠকের মতামত