রোহিঙ্গা নির্যাতনসহ দেশটির চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। গত ২৫ আগস্ট জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার ইস্যুর বাইরেও বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।
সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, গত সপ্তাহে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে একজন শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, তিনি মিয়ানমারের স্কুলে সব শ্রেণিতে খুবই ভালো ফল করেছিলেন। তিনি একজন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ডাক্তার হওয়ার পরিবর্তে তার দেশ থেকে পালিয়ে গত পাঁচ বছর তিনি শরণার্থী শিবিরে কাটিয়ে দিয়েছেন, কারণ তিনি রোহিঙ্গা। সেই শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, তাঁর বন্ধুরা এখন মিয়ানমারে ডাক্তার।
তিনি বলেন, শরণার্থী হিসেবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ছিল। আমি আমার শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পেরেছি। সেসঙ্গে পেয়েছিলাম ভালো জীবনযাত্রা। তবে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে তাঁদের স্বেচ্ছায়, সন্মান ও মর্যাদার সঙ্গে টেকসই প্রত্যাবাসনের যে সহায়ক পরিবেশ প্রয়োজন, তা এখনও তৈরি হয়নি।
মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, আজ পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে, যেখানে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে যেতে বাধ্য হয়েছে। মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। দেশটির সামরিক বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব কায়াহ এবং কাইন ও উত্তর-পশ্চিম চীন রাজ্যে এখনও সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম ও আবাসিক এলাকায় বিমান দিয়ে গোলাবর্ষণ তীব্র হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার যে চিত্র তা এটাই অনুমান করায় যে, দেশটির অভ্যন্তরে থাকা স্থিতিশীল রাজ্যও এ সশস্ত্র সংঘাত এড়াতে পারবে না। দেশটির সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যকার যুদ্ধে প্রায়ই রোহিঙ্গা সম্প্রদায় পড়ে যাচ্ছে, অথবা তাঁদের ইচ্ছে করেই এ সংঘাতের মধ্যে জড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন এবং নাগরিকদের ওপর আক্রমণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের আলোকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো আমরা প্রতিদিনই নথিভুক্ত করে থাকি। যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের সমান।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, মিয়ানমারের মানুষের ওপর সহিংসতা বন্ধে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়াতে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই। সেসঙ্গে বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত তাঁদের জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বেশকিছু দেশ সফরের কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তবে সেই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রসঙ্গ আসেনি। সমকাল
পাঠকের মতামত