বাংলাদেশ সীমান্তে একের পর এক গোলাবর্ষণের ঘটনাকে মিয়ানমারের উস্কানিমূলক আচরণ বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এসব ঘটনাকে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ‘অনিচ্ছাকৃত ও ভুলবশত’ বললেও বিষয়টি এতটা সহজভাবে নিতে নারাজ তারা। তাই সরকারকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত ছাড়া বাংলাদেশের স্থলসীমা কেবল মিয়ানমারের সাথেই। যদিও দেশটির সাথে কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক সম্পর্ক কখনোই গভীর ছিল না। উল্টো নানা অঘটন আর উত্তেজনায় ভরপুর দ্বিপাক্ষিক এই পথচলা।
২০০৭ সালে সেন্ট মার্টিনসে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে পড়ে মিয়ানমারের দু’টি যুদ্ধজাহাজ। তোপের মুখে ভুলবশত প্রবেশের অজুহাত দিয়ে ফেরত যায় তারা।
২০১১ সালে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে অস্ত্রসহ বিজিবি সদস্য অপহরণের দুঃসাহস দেখায় দেশটির সীমান্তরক্ষীরা। সপ্তাহখানেকের মাথায় তাকে ফেরাতে সক্ষম হয় ঢাকা।
পরের বছর থানচিতে মর্টারশেল ও গোলা বর্ষণ করা হয়। একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৬-১৭ সালেও।
২০১৪ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গুলি চালিয়ে বিজিবির এক সদস্যকে হত্যা করে অস্ত্রসহ লাশ নিয়ে যায়। পরে মরদেহ ফেরত দিলেও পাওয়া যায়নি অস্ত্র।
এছাড়া ২০১৯-২০’এ দু’তিনবার সেন্টমার্টিনসকে নিজেদের অংশ বলে ম্যাপে দেখায় নেইপিদো। সবশেষ ঘটেছে কয়েক দফা মর্টারশেলের ঘটনা। প্রতিবারই তলব করা হয় রাষ্ট্রদূতকে। তার ব্যাখ্যা, ‘ভুলবশত’ ঘটেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, যে ঘটনা বারবার ঘটে তাকে ভুলবশত ঘটেছে বলার অবকাশ নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের সেনাবাহিনী সামনে এগিয়ে যেতে পারে; যেটাকে ফরোয়ার্ড ডিপ্লয়মেন্ট বলে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোঃ নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, এসব ঘটনার সাথে কৌশলগত কিছু বিষয় থাকতে পারে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অথবা আমলাতান্ত্রিক বিষয়ও জড়িত থাকতে পারে।
স্থল বা আকাশসীমায় প্রবেশ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ঠান্ডা মাথায় এ নিয়ে করণীয় ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি না, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি এত খারাপ যে এখন একটা সংঘাতের সম্ভাবনা আছে। তবে সেনাবাহিনী বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ করতে পারে। আমাদের বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম না করে সীমান্তের খুব কাছ দিয়ে উড়ে আমরা তাদের দেখাতে পারি।
দীর্ঘমেয়াদে টেকসই সম্পর্কের জন্য দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোরও পরামর্শ দেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল (অব.) মোঃ নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, দু’টি দেশের মধ্যে সম্পর্ক কেবল সরকারের সাথে সরকারের থাকলে হবে না। এটা করতে হবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে, মানুষ থেকে মানুষে, ব্যবসা বাণিজ্য এবং সকল ক্ষেত্রে। সুত্র:;যমুনা টিভি